Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে সহিংসতা: সর্বোচ্চ সতর্ক প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:১৭

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। প্রার্থীরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে। তবে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে সহিংসতা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই প্রাথীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় প্রার্থী থেকে শুরু করে কর্মী-সমর্থকরা আহত হচ্ছেন। এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ধরনের অবনতি যেন না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্বাচন ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এরই মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে সারাদেশে মাঠে নজরদারি করছে র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সব মিলিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ছয় লাখ সদস্য মাঠে থাকবেন। নির্বাচনের পর ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তারা।

অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি প্রশাসন ক্যাডারের ৬৩৭ জন কর্মকর্তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ম্যাজিস্ট্রেটরা আগামী ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তারা নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করবেন।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক সোহেল রানা সারাবাংলাকে জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাখা হয়েছে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং কুইক রেসপন্স টিম। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো মূল্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চাই। নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ যেকোনো বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে বিশেষ নজরদারি রয়েছে। সীমান্তে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব রাজনৈতিক দলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, আমি সব রাজনৈতিক দলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করি, নির্বাচন যেন নির্বাচনের মতো হয়। সহিংসতা, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, তর্ক-বিতর্ক, হাঙ্গামা

পরিহার করে কেবল মাত্র নির্বাচনি প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনে নিবদ্ধ

থাকার জন্য অনুরোধ করি। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামায় ভোটারদের আস্থা বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মকৌশল তৈরি করেছে। গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের ৩০ জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি করেছে পুলিশ সদর দফতর। আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটিতে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমানকে সহসভাপতি ও ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

এর আগের দিন সব ক’টি রেঞ্জের ডিআইজি, সব পুলিশ কমিশনার ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারও আগে গত ১১ নভেম্বর সারাদেশকে চারটি বৃহত্তর অঞ্চলে ভাগ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি করে দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের আট কর্মকর্তাকে।

এর মধ্যে, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম রাজশাহী-রংপুর মহানগর ও রেঞ্জের দায়িত্ব পালন করবেন। ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ দেখবেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপকমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। খুলনা ও বরিশাল মহানগর ও রেঞ্জ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছেন

এসবি’র অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলাম ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম ও সিলেট মহানগর এবং রেঞ্জের তদারক করবেন অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৪০৭ উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে ৩৮৯ উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনী টহল দেবে। প্রতি জেলায় এক ব্যাটালিয়ন করে ৩০ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র বাহিনী সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর এই সদস্যরা। তারা জেলা/উপজেলা/মহানগর এলাকার সংযোগস্থলে ও অন্যান্য

সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবেন। তারা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন।

এছাড়া সারাদেশে এক হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এর মধ্যে ঢাকায় থাকছে ৫০ প্লাটুন বিজিবি। পাশাপাশি এলিট ফোর্স র‌্যাবের প্রায় ১০ হাজার সদস্য মাঠে থাকবেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে র‌্যাব ট্রেনিং স্কুলে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও মহড়া করেছেন র‌্যাব সদস্যরা। অন্যসব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করেই দায়িত্ব পালন করবেন তারা। সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে হেলিকপ্টার। র‌্যাব সদর দফতরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকেও কয়েকটি ভাগ করে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর/আরএফ 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনী সহিংসতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেনাবাহিনী মোতায়েন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর