ইশতেহারে নেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা, ভোটারদের ক্ষোভ
২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৯
।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী: আর মাত্র তিনদিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চারিদিক মুখর নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায়। রাজশাহীও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে গত কয়েকদিনে রাজশাহীবাসীর আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত ইশতেহারের বিষয়টি।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের নানা দিক ইশতেহারে থাকলেও সেখানে নেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা। যা ভোটারদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে দলগুলো।
তবে রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হলেই কখনও বাজারদর বৃদ্ধি পায় আবার কখনও তা কমে। তাই এই বিষয়টি ইশতেহারে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেননি তারা।
দলগুলোর ইশতেহারে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনা, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, নারীর মর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার মতো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি থাকলেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে কোনো বার্তা নেই।
রাজশাহীর ভোটাররা বলছেন, ২০০২ সালের পর থেকে দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে নেই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্যের দাম সঠিক না পেলেও অন্যান্য পন্যের দাম লাগামহীন বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, যে পন্যের দাম একবার বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে তা মোটেও আর কমে না। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষদের ভোগান্তির শেষ নেই।
ভোটারদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যবাসয়ীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই ইশতেহার ঘোষণার সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে বা বাজারমূল্য বৃদ্ধি করলে সেই মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না তা পরিস্কার করে বলা হয় না। যদিও বলা হয়, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে যারা কারসাজি করবেন তাদের বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করে বলা হয় না। এতে করে নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে বিপাকে ফেলছে। তাই ভোটাররা দাবি তুলছেন ইশতাহারে এবার বিষয়টি আন্তর্ভূক্ত না করলেও যে রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে প্রথমেই এই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখবে।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ইশতেহার ঘোষণা করে তবে এর বাস্তবায়ন কতটুকু করে কেউ বিষয়টি খেয়াল করে না বা খতিয়ে দেখে না। এবারের নির্বাচনে ঘোষিত ইশতেহারে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। আর থাকবে কিভাবে? রাজনৈতিক দলগুলো তো পরিচালনা করেন ব্যবসায়ীরা। প্রার্থী দেখলেই তা বোঝা যায়।
মহানগরীর মহিষবাথান এলাকার গৃহিনী ফজিলাতুন্নেসা বলেন, ‘বাজারে দ্রব্যসামগ্রী কিনতে গেলেই বোঝা যায় স্বল্প আয়ের মানুষদের কি অবস্থা হচ্ছে। কোনো সরকারই বিষয়টির প্রতি নজর দেয় না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল মঞ্চে উঠে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে থাকেন। কিন্ত ইশতেহার ঘোষণার সময় বিষয়টি রাখেন না।’
কোর্ট নিউ মার্কেটের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জহুরুল হক বলেন, ‘নির্বাচন আসলেই রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য শোনা যায়। ইশতেহারে কি থাকছে তাও কিছুটা জানিয়ে দেয়। এমনকি সংবাদপত্রগুলোতেও লেখালেখি হয় ইশতেহারে কোন কোন বিষয় প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্ত ঘোষণার সময় দেখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাখে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ হবার পরেও কেনো তারা বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যায় বুঝি না। হয়ত এমন হতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে ইশতেহারে ঘোষণার পর তা বাস্তবায়ন না হলে জনগন হাজারো প্রশ্ন করবে। এই জন্য হয়ত বিষয়টি এড়িয়ে যায়।’
জেলা ন্যাপের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান খাঁন বলেন, ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি সব সময় উপেক্ষিত থাকে। কোনো রাজনৈতিক দল তা রাখে না। অথচ বিভিন্ন জনসভা, সমাবেশে কিন্ত দ্রব্যমূল্য নিয়ে নানা কথা বলা হয়। এটা অবশ্যই ইশতেহারে রাখা উচিত।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আসলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হলে সব জিনিসের মূল্য বাড়ে। আয় বাড়ার সাথে সাথে ব্যয়ের সঙ্গতিও তখন থাকে। এ জন্য নির্বাচনি ইশতেহারে বিষয়টিকে পৃথকভাবে দেবার তেমন দরকার হয় না। তাই কখনই ইশতেহারে বিষয়টা আসে না।’
মহানগর বিএনপির সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আনার মত তেমন কিছু নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে দ্রব্যমূল্যের ওঠানামা থাকে। আলাদা করে একে দেখার কিছু নেই।’
সারাবাংলা/এসএমএন