ঢাকা-১৬: হ্যাট্রিক মিশনে ইলিয়াস মোল্লাহ্, প্রচারে নেই হাসান
২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:০৩
।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ঢাকা-১৬ আসনে হ্যাট্রিক জয়ের মিশনে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় মাঠ সরগরম করে রেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন তদবির নিয়ে আসা মানুষের পদচারণায় মুখর মোল্লাবাড়ির বৈঠকখানা।
মিরপুরের পল্লবী ও রূপনগরের অলি-গলি ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে। প্রায় সমান তালে চোখে পড়ে হাতপাখা, কোদাল ও গোলাপ ফুলের পোস্টার। তবে বিএনপির প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসানের বাড়ির সামনে ধানের শীষের পোস্টার দেখা গেলেও চোখে পড়ে বেশ কিছু ছেঁড়া পোস্টারও।
ঢাকা-১৬ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুয়ারীপাড়া মোড়ে টানানো বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ছেঁড়া পোস্টার স্তুপাকারে পড়ে থাকতে দেখা গেছে সেখানকার ডাস্টবিন ও ফুটপাত লাগোয়া ড্রেনে। মাঠে নেই বিএনপি প্রার্থী হাসান। বন্ধ রয়েছে তার মুঠোফোন। ৫০-এর অধিক মামলার আসামি হাসানকে প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসেও কাছে পায়নি ভোটাররা। মিরপুর-৬ নং সেকশনে হাসান ও হাসানের শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও এ প্রতিবেদক কারও দেখা পাননি। বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা-১৬ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
মিরপুর-১০ থেকেই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ-এর পোস্টার চোখে পড়ে। প্রতিটি মোড়ে, ভবনের সামনে, রাস্তার দুই পাশেই দেখা গেছে তার পোস্টার। এ ছাড়া মিরপুর-১২ থেকে মোল্লাবাড়িতে ঢোকার পথে কোদালের বেশ কিছু পোস্টার দেখা গেছে। দেখা মিলেছে হাতাপাখার পোস্টারও। দুয়ারীপাড়া মোড়ে রয়েছে কোদালের পোস্টারের আধিপত্য। সেখানে দেখা মিলছে হাতপাখা ও গোলাপ ফুলের পোস্টার। অন্যান্য স্থানের চিত্রও প্রায় অভিন্ন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুয়ারীপাড়া মোড়ে গত দুই থেকে তিন দিন ধরে ধানের শীষের পোস্টার ছিল। তবে, আজ সকালে তা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে ধানের শীষের বেশ কিছু ছেঁড়া পোস্টার দেখা গেছে। ডাস্টবিন ও ফুটপাত লাগোয়া ড্রেনে এসব পোস্টার স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক রিকশাচালক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন এখানে ধানের শীষের পোস্টার দেখা গেছে। কিন্তু আজ সকালে দেখেছি ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে এখানে নৌকার পোস্টার লাগানো হচ্ছে।’
এদিকে, মিরপুর-৬ নং সেকশনে বিএনপির প্রার্থী হাসানের বাড়ির সামনে ধানের শীষের বেশ কিছু পোস্টার দেখা গেছে। তবে কোনো কোনো রশিতে পোস্টার নেই। নিচে ছেঁড়া পোস্টার পড়ে রয়েছে। খোদ এই প্রার্থীর বাড়ির সামনেই পোস্টার ছিড়ে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরবান প্রিপারেটরি স্কুলের লাল রঙের ভবনটির দুই তলায় হাসানের বাসা। সেখানেও কেউ নেই। পুরোটাই সুনসান নীরব। আর পাশের গলিতেই হাসানের শ্বশুর বাড়ি। সেখানেও ধানের শীষের বেশ কিছু পোস্টার দেখা গেছে। তবে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। বিএনপির প্রেস উইং থেকে সরবরাহ করা হাসানোর মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, হাসানের স্ত্রী রিনা হাসান গত ১৫ ডিসেম্বর মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে প্রচার চালাতে গেলে হামলার শিকার হন বলে জানা গেছে। পরে রিনা হাসান ও তার বোন রুমানা আক্তারকে আটক করে পল্লবী থানা পুলিশ। অবশ্য পরদিন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসানের স্ত্রীর রিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ বেশ জনপ্রিয়। গরীব-দুঃস্থতদের পাশে দাঁড়ানোর নজির রয়েছে ইলিয়াসের।
তবে, আসনটির অনেক ভোটাররই রয়েছেন মোল্লাহ্ আতঙ্কে। ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নন কোনো ভোটার। আওয়ামী লীগের সমর্থক স্থানীয়দের প্রত্যাশা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে মোল্লাহর হ্যাট্রিক মিশনের মাধ্যমে।
সকালে মোল্লাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক টিউশন ফি কমাতে দ্বারস্থ হয়েছেন ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর। তিনি শিক্ষার্থীদের নাম ও রোল নম্বর জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিস কমানোর অনুরোধ করেন। একটি কলেজের শিক্ষকদেরও দেখা গেছে তার বৈঠক খানায়। এ ছাড়াও কয়েকজন দুস্থ লোককেও সাহায্য করতে দেখা গেছে। পরে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জয় সুনিশ্চিত। আমি শতভাগ আশাবাদী।’
হ্যাট্রিক জয়ের মিশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাট্রিক জয় তো আমার নয়, হ্যাট্রিক জয় ঢাকা-১৬ আসনের জনগণের। কারণ জনগণ আমাকে দুই মেয়াদে নৌকায় ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। আমি তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টা করেছি। গত ১০ বছরে মানুষ যা আশা করেনি, তারচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছি। বাকি যে কাজগুলো আছে—মানুষ যদি আবার আমাকে ভোট দেয়, নির্বাচিত করে তবে তা সমাপ্ত করবো।’
ভোটারদের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহ যদি আবার আমাকে সুযোগ দেয়, জনগণ যদি ভোট দেয়, এ এলাকার মানুষের জন্য ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল করবো। যাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো হাসপাতালে রোগী নিতে গিয়ে পথে কারও মৃত্যু না ঘটে। জয়ী হলে এ এলাকায় একটি বাস টার্মিনাল করবো। এ এলাকাকে ৯৫ শতাংশ মাদকমুক্ত করা হয়েছে, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বাকি পাঁচ শতাংশ কাজ শেষ করে, আমার এলাকাকে সর্বপ্রথম মাদকমুক্ত ও জিরো টলারেন্স ঘোষণা করবো।’
নির্বাচনি প্রচারণায় বিএনপির প্রার্থীকে বাধা দেওয়া এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বলেন, ‘মিথ্যা কথা না বললেই হয়। যাকে ১০ বছর আগে এ এলাকা থেকে বিতাড়ন করেছে জনগণ, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে—সে তো একজন ক্রিমিনাল। এ এলাকায় তো সে নিজেই ঢুকতে পারে না, তাহলে প্রচার করবে কীভাবে?’
হাসান গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, তার বাড়ি আপনার লোকেরা ঘিরে রেখেছে, তাই তিনি এলাকায় আসতে পারছেন না; এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোল্লাহ্ আরও বলেন, ‘ও যদি এটা বলে থাকে তাহলে আপনি যান। গিয়ে দেখে আসেন। ওর বাড়ির নিচে আমার কোনো লোক পাবেন না। আমি যদি অর্ডার দেই তো কিছুই থাকবে না। আমি অর্ডার দিবো কেন? ওরে পাঠাইয়া দেন, আপনার মাধ্যমে নিয়ে আসেন, ওর হাতে হাত রেখে ও একদিকে প্রচার করবে, ওর হাত ধরে আমি আমার নৌকার প্রচার করবো।’
ঢাকা-১৬ আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। মিরপুরের পল্লবী ও রূপনগর থানা নিয়ে এই আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৭ জন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ (নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ হাসান (ধানের শীষ), জাকের পার্টির আলী আহমেদ (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নাঈমা খালেদ মনিকা (কোদাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহা. ছিদ্দুকর রহমান (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ফরিদ উদ্দিন শেখ (আম)।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই