।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী সম্পর্কে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কড়া জবাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। বাহিনীর পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আপত্তিকর ও অবিবেচনাপ্রসূত বলে উল্লেখ করা হয়।
বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশ পুলিশকে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত ও প্রচারিত এ সংবাদের প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন-এর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।”
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ডিএমপি কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) উপকমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে, গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সাথে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের এক পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে – ‘আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না’- বলেন মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।”
“এ ধরনের আপত্তিকর, অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মতো জননিরাপত্তা ও জন-শৃঙ্খলা বিধানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনকারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মতো অপপ্রয়াস নেওয়া হয়েছে”- উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
“প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করেছিল বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্যরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে প্রথম যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বিলিয়ে দিতেও কখনও পিছপা হয়নি। তাই ড. কামাল হোসেনের মতো মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকের কাছ থেকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য জাতির মনে ভিন্ন চিন্তার উদ্রেক করে।”
বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, “বাংলাদেশ পুলিশের ২ লক্ষ সদস্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন ও উদঘাটনে বদ্ধপরিকর। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রয়েছে। সৃষ্ট নিরাপত্তা বলয়ে নিয়মিত সংঘটিত হচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামিট, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। জঙ্গি কার্যক্রম, সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অপরাধ সুচারুরূপে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২৭ জন সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন।”
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ নিরাপদ পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের ওপর অর্পিত হয়েছে। নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচন সামগ্রী প্রেরণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার সদস্য দেশব্যাপী নিয়োজিত হয়েছে। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশ পুলিশকে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবলে আঘাত হেনে বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টির যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।”
সারাবাংলা/ইউজে/এটি