নারায়ণগঞ্জ-১ আসন: এলাকার উন্নয়নই ‘ভোটের মাঠে’ কথা বলবে
২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ থেকে ফিরে: এই এলাকাতে যা যা উন্নয়ন হয়েছে সেগুলোই কথা বলবে এবারের নির্বাচনে। আমরা যারা এ এলাকায় বাস করি, তারা জানি সেসব উন্নয়ন আমাদের জীবনকে কতটা উন্নত করেছে। এমন প্রতিক্রিয়া নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের ভোটারদের।
এদিকে, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) তার গণসংযোগে বলছেন, ‘রূপগঞ্জবাসীর কোনো চাওয়া-পাওয়া আমি অপূরণ রাখিনি। উন্নয়নে আমি আসার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এছাড়া আরও অনেক কাজ চলমান রয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা সব কিছুর উন্নয়ন রূপগঞ্জে হয়েছে। আমাকে এবার আবারও সুযোগ দিন আমি আপনাদের বাকি চাওয়াগুলো পূরণ করব। এ জন্য আগামী ৩০ তারিখ নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তবেই উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।’
ভোটাররা বলছেন, ‘গাজী সাহেবের কথায় আমাদের আস্থা আছে, কারণ এই এলাকার জন্য তিনি আগে যেসব উন্নয়ন করেছেন তার প্রত্যক্ষ সুফল পাচ্ছি আমরা।’
‘আগামীতে তিনি ক্ষমতায় এলে রূপগঞ্জের আরও উন্নয়ন হবে বলেই আমাদের ভোট যাবে নৌকায়’ বলছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: প্রচারণার শেষ দিনে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গোলাম দস্তগীর গাজী
তারা বলছেন, ১০ বছর আগের রূপগঞ্জ আর বর্তমান রূপগঞ্জের মাঝে তফাৎ অনেক। তাই এবারের নির্বাচনে এলাকার উন্নয়নই ভোটের মাঠে কথা বলবে, অন্য কিছু নয়।
এদিকে এলাকার তরুণ ভোটারদের কাছে উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাধান্য পাচ্ছে হানাহানিমুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জামদানি পল্লীর কারিগর ২১ বছরের রুবেল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব জায়গাতেই মারামারি হয়, সংঘর্ষ হয়। তবে আমাদের এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে, এলাকার কোথাও হানাহানি-মারামারি নেই।’
শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের দুইটা গ্রুপের কথা শুনলেও এখন সবাই এক। সবাই এক নৌকার মাঝি। রুবেল বলেন, ‘কোথাও কোনো মারামারি নেই। আমাদের হিসাব হচ্ছে, গাজী সাহেব জিতলে ভালো হয়।’
‘এলাকার সবাই কইতাছে গাজী সাবের কতা ( কথা), দশমত যার, আমরাও তো সেই কতা বলব।’
জামদানি পল্লীতে বসে যখন রুবেলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন পাশে এসে দাঁড়ায় সবুজ। রুবেলের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবুজ বলেন, ‘যারা আছে তারাই ভালো। আছে তো নৌকা পাল্টা মন্তব্য করলে সবুজ বলেন, ‘তারা তো এ এলাকার উন্নয়ন করছে, সবাই তারে চাইবে এটাই নিয়ম।’
তিনি বলেন, ‘এখনকার এমপি গাজী সাহেবরে সবাই পছন্দ করে আর গাজী সাহেব মানেই নৌকা।’
তবে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কেবল তরুণদের সঙ্গেই নয়, কথা হয় বৃদ্ধ এবং নারীদের সঙ্গেও। তারাও জানান, এলাকার উন্নয়টাই তাদের ভোট দেওয়ার জায়গাটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। মানুষ যদি নিজের ভালো বোঝে তাহলে সে অবশ্যই নৌকার প্রার্থী ‘গাজী সাহেব’কে ভোট দেবে।
মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দা গ্রামের কৃষক ৬০ বছরের ফকির চান মিয়া। ফকির চান মিয়া বলেন, ‘সব নৌকা, আমাগো অন্য কোনো মার্কা নাই, সব গাজী।’
চরমোনাই পীরের মুরিদ তিনি। তাই জীবনের প্রথম ভোটটা তাকেই দিয়েছিলেন, অকপটে গ্রাম্য সরলতায় বলেন তিনি। তবে যোগ করে পরেই বলেন, ‘প্রথমবার তারে ( চরমোনাই পীর) ভোট দিছি, হেয়ারবাদে ( তারপর) হইল গাজীরে।’
গাজী সাহেব এলাকার জন্য অনেক কাজ করছে, লোক হিসেবেও ভালো পাইছি।
গত ১০ বছর ধরে গাজী সাহেব এমপি ছিল, এবারও তারেই ভোট দেব। এলাকার অনেক উন্নয়ন করছে, এলাকাতে অন্য কোনো প্রার্থী নাই।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, তার মতো সাধারণ একজন মানুষও বর্তমান এই সংসদ সদস্যের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হননি।
কী হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একবার গেছিলাম তার কাছে, ব্যবহার খুব ভালা ছিল, যে কাজে গেছিলাম, সেই কাজও হইছে। তাইলে এমন মানুষরে ভোট দিমু না তো কারে দিমু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন ফকির চান মিয়া।
আর এলাকার নারীরা গাজী সাহেবকে সম্বোধন করেন বাবা বলে। আমেনা বেগম, উম্মে হানি, হাফেজা খাতুন, মাকসুদা বেগম তাই জানালেন। বাবার মতো সব দায়িত্ব পালন করেন বলেই তারা এ নামে ডাকেন বলেও জানালেন তারা।
আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান সে করে দিয়েছে, বলেন আমেনা বেগম। এতো কাছাকাছি যে এমপি সাহেবরে পাবো-এটা স্বপ্নেও ভাবিনি মন্তব্য করে চোখ মোছেন আমেনা বেগম। বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়ে, বই কিনতে টাকা লাগে কিন্তু সবসময় টাকা থাকে না। তারে আইসা বললেই টাকা দিছে।’
আমেনা বেগমের এক মেয়ে সরকারি তোলারাম কলেজে অর্নাসে, এক ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে এবং আরেক ছেলে স্থানীয় এক স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে এবং এর পুরো কৃতিত্ব গোলাম দস্তগীর গাজীর জানালেন তিনি। একইসঙ্গে বলেন, ‘পানি পাইছি, গ্যাস পাইছি, বিদ্যুৎ পাইছি।’
‘কয়েক বছর আগেও পানি নিয়ে কত কষ্ট করছি। খাইতে পানি পাই নাই, দিনের পর দিন গোসল না কইরা থাকছি, অনেক দূর থিকা কলসি দিয়া পানি আনতে হইত। আর এখন আমরা বিশুদ্ধ পানি পাইতেছি-পানির কোনো কষ্ট নাই-আমাদের এসব সমাধানতো গাজী সাহেবই করছে, তাইলে তারে ভোট দিমু নাতো, কারে দিমু। আর কাউরে তো চিনিই না’ বলেন আমেনা বেগম।
পাশে থাকা ফাতেমা বেগম যোগ করেন, ‘আগে বাড়ি থেইক্যা বাইর হইলে কাদা-পানি পাড়াইতে হইত, কিন্তু এখন বাড়ির সামনে রাস্তায় গাড়ি (স্থানীয় রিকশা) দিয়া ঘরের দরজায় যাইতে পারি।’
রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার মাকসুদা বেগম বলেন, ‘কোনো মানুষ তার কাছে এসে বিফলে ফেরত গেছে এমন নজির নেই। কারও মেয়ের বিয়ের টাকা নেই, সে টাকা দিয়েছেন। বই কেনার টাকা নেই, সে টাকা দিয়েছেন। যে যেই অসুবিধা নিয়ে আসুক না কেন তার সমাধান করে দিয়েছেন। এলাকাতে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, রাস্তা-ঘাট সব সে করছে, আমরা বারবার রূপগঞ্জে তাকেই চাই।’
আর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হেলেনা বেগম, উম্মে হানি বলেন, ‘উনি গরিবের চিকিৎসা করান, যার ঘরে টিন ছিল না, তারে টিন দিছে, ঘর তোলার জন্য জায়গা দিছে-তাইলে তারে ভোট না দিলে তো নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকমু না।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ শক্তিশালী একটি দল। গোলাম দস্তগীর গাজীকে দেশনেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ অবশ্যই নৌকাকে ভোট দেবে। আমরা অবশ্যই নৌকার বিজয় নিয়ে ঘরে যাব।’
আরও পড়ুন: নৌকা দিয়া দেশ পাইছি, নৌকাতেই ভোট দিতাম
সারাবাংলা/জেএ/একে