মাঠে একচেটিয়া কাদের, রণে ভঙ্গ মওদুদ
২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:০১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী থেকে: হামলার পর মাঠ ছেড়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এখন একচেটিয়া নির্বাচনের মাঠে দৌড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নিজ আসনের গণসংযোগ সেরে আশপাশের আসনে গিয়েও সময় দিচ্ছেন। প্রচারণার মাঠে অনেকটা নো টেনশনে নোয়াখালী-৫ আসনের বর্তমান এই সংসদ সদস্য। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তার জনসমর্থনও বেশি বলে মনে করছেন তিনি।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, বসুরহাট ও কবিরহাট উপজেলা (আংশিক) নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের নোয়াখালী-৫ আসন। কাদের ও মওদুদ— এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এখানে লড়ছেন ভোটযুদ্ধে।
তবে ভোটের চার দিন আগে প্রচারণা-গণসংযোগ স্থগিত করে মাঠ ছেড়েছেন মওদুদ। তার গাড়িতে হামলা হয়েছে— এ অভিযোগ তার। যদিও ওবায়দুল কাদের বলছেন, এটা সাজানো নাটক।
এ বিষয়ে মওদুদ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের মিথ্যাবাদী। ন্যূনতম সৌজন্যতাবোধ নেই। ঢাকায় গয়েশ্বরের ওপর হামলার পর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাকে দেখতে গিয়েছেন। আমার ওপর হামলার পর ওবায়দুল কাদের একটা ফোনও দেননি। তাহলে বোঝেন, কী ধরনের প্রতিহিংসার শিকার আমি।’
অবশ্য মাঠ ছাড়লেও নির্বাচন ছাড়ছেন না মওদুদ। ভোট করবেন কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটে থাকব। জনগণ সঙ্গে আছে।’
ওবায়দুল কাদের নির্বাচনি মাঠে এখন প্রতিদিন একাধিক পথসভাসহ গণসংযোগ করছেন। এসব পথসভায় বিপুল উপস্থিতি তাকে আশাবাদী করেছে। এর আগে তিনি দু’টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এলাকাবাসীর জন্য— বিদ্যুৎ ও সড়ক। এ দুই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে এখন জনগণের সামনে ফুরফুরে মেজাজে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের।
সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এটাই আমার প্রথম নির্বাচন। মানুষ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে। উন্নয়ন চায় বলে আবারও আমার পক্ষেই আছে। বিপুল ভোটে জয়ের প্রত্যাশায় আছি।’
প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীর প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, ‘বিএনপির দিকে জনসমর্থন নেই। তারা ভুয়া প্রতিশ্রুতি দেয়। তাদের প্রার্থী ১৫ দিন ধরে বাড়িতে বসে রয়েছেন। তিনি বের হন না। কারণ বের হলে মানুষ তার কাছে তেমন ভিড়ে না।’
নোয়াখালী-৫ আসনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন নয়। ১৯৯১ সাল থেকেই গত ২৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরকে ৪ হাজার ভোটে হারিয়ে পাস করেছিলেন মওদুদ আহমদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবার মওদুদ পরাজিত হন ১২ হাজার ভোটে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সময় ফের বড় ব্যবধানে জিতে যান মওদুদ। দুই প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল ২০০৮ সালে, সেবার মাত্র ১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন কাদের। পরে ২০১৪ সালে ওবায়দুল কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আবার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন তারা।
এদিকে, দু’দিন আগে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে গণসংযোগে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আবার ভোট দিলে তিনি সবার বাড়ি বাড়ি গ্যাস সংযোগ দেবেন। ঘরে ঘরে একটি করে হলেও চাকরি দেবেন।
স্থানীয়রা এসব প্রতিশ্রুতিতে বেশ উল্লাসিত। কারণ দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি জিতলে প্রতিশ্রুতি বাস্তাবায়ন সহজ বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে, বিএনপির কোনো পোস্টার-প্রচারণাও ভোটারদের চোখে পড়ছে না। তবু শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে থাকলে ভোটের হিসাবে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
সারাবাংলা/টিআর