।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
নওগাঁ: নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের নির্বাচনি ময়দান জমে উঠেছে দুই নতুনের লড়াইয়ে। এখানে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন জলিল ও বিএনপির জাহিদুল ইসলাম। এই দুই প্রার্থীই ভোটযুদ্ধে নতুন। দুই প্রার্থীর সমর্থক ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ৫০ নম্বর সংসদীয় আসন নওগাঁ-৫। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৭০১ জন। নতুন ভোটার ৫৭ হাজার ৯১৮ জন। ১৯৯১ সালের পর থেকে ‘একতরফা’ ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন বাদে এই আসনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে দুইবার (২০০১ ও ২০০৮) এবং বিএনপি জয় পেয়েছে দুইবার (১৯৯১ ও ১৯৯৬)। পূর্বের নির্বাচনগুলোতে এখানে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ছুটে ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও তাঁদের নিয়ে শুরু করেছেন বিচার-বিশ্লেষণ। গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় সবখানেই গল্প-আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের এই দুই প্রার্থী।
নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী হিসেবে দুজনেই নতুন। তবে তাঁদের মধ্যে নির্বাচনি লড়াই জমবে ভালো। নতুন হলেও দুজনেই পরিচিত মুখ এবং দুজনেই শান্তিপ্রিয় মানুষ। এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নতুন প্রার্থী চায় মানুষ। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের আসন হিসেবে পরিচিত নওগাঁ-৫ আসন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি এই আসনে নির্বাচন করেছেন। আটবার নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন পাঁচবার। ২০১৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মালেক সাংসদ নির্বচিত হন। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে তিনি আবারও নির্বচিত হন।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাংসদ আব্দুল মালেক দল থেকে মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ২৮ বছর বয়সী তরুণ নেতা নিজাম উদ্দিন জলিল (জন)।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, অনেক জরিপ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে বর্তমান সাংসদ আব্দুল মালেককে সরিয়ে এখানে নিজাম উদ্দিন জলিলকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নিজাম উদ্দিন রাজনীতির মাঠে নতুন হলেও বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অল্প দিনেই তিনি সাড়া ফেলেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘জননেতা আব্দুল জলিল শুধু নওগাঁ নয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন অভিভাবক ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি নওগাঁ সদর থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল একজন উচ্চশিক্ষিত ও স্বচ্ছ ভামমূর্তির প্রার্থী। তাঁর জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।’
নিজাম উদ্দিন জলিল বলেন, ‘নির্বাচিত হতে পারলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারায় নওগাঁকে আরও উন্নত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে ও আমার বাবার দেখানো পথে সাধারণ মানুষের সেবা করতেই নৌকার মাঝি হয়েছি।’
নৌকার প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিলের বিপরীতে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন নওগাঁ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। রাজনীতির মাঠে পুরনো হলেও এবারই প্রথম সংসদ সদস্য প্রার্থী হলেন তিনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিলের মতো প্রার্থীকে হারিয়ে এখানে বিএনপির প্রার্থী সামসুদ্দিন চৌধুরী জয়ী হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালেও এখানে বিএনপির প্রার্থী অল্প ব্যবধানে হেরে গেছে। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এছাড়া শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনেও এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বর্তমানে জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। সুষ্ঠু ভোট হলে এখানে বিএনপির প্রার্থীই জয়ী হবেন।
নওগাঁ পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির আহমেদ বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম একজন ভালো সংগঠক। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই। দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে তিনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী। এখানে ধানের শীষকে জয়ী করতে জাহিদুল ইসলামের পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা নিয়েই ভোটযুদ্ধে নেমেছি। যেহেতু নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি, তাই ভোটারদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছি। তাঁদের দোয়া চাইছি। এখানে বিএনপির যে সুদৃঢ় অবস্থান রয়েছে, তাতে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া এই দুই প্রার্থীর হলফনামা থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিলের পেশা আইন পরামর্শক। শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যারিস্টার অ্যাট ল। হলফনামায় তিনি বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ৪ হাজার ৭৬৭ টাকা। যার পুরোটাই আসে আইনজীবী পেশা থেকে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ১৩৯ টাকা ছাড়া তাঁর আর কিছুই নেই। এছাড়া তাঁর কোনো স্থাবর সম্পদও নেই। তবে তাঁর উল্লেখযোগ্য তেমন সম্পদ না থাকলেও ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৬ কোটি ৭০ হাজার ৭০৩ টাকা।
বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের পেশা ব্যবসা। তিনি বি.কম পাস। তাঁর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যার পুরোটাই আসে ব্যবসা থেকে। জাহিদুলের কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। অস্থাবর সম্পদ বলতে রয়েছে ১৫ ভরি সোনা (মূল্যায়ন করা নেই) ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৫ ভরি সোনা (মূল্যায়ন করা নেই) ও ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানার সাড়ে ৪ কাঠা জমির ওপর তিন তলা একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া তাঁর নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই বলে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর কোনো দায়-দেনা নেই। জাহিদুলের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় একটি মামলা রয়েছে।
সারাবাংলা/এমও