।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দলীয় নেতাকর্মীদের নিরাপদে চলাচল করার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনো বিশ্বাস নাই। এরা জানে তারা নির্বাচনে জয়ী হবে না, তারা হেরে যাবে। তাই হেরে যাওয়ার প্রাক্কালে যেকোনো রকমের ছোবল মারতে পারে। সেইদিকে আপনারা সজাগ থাকবেন। জনগণের জোয়ার আমাদের পক্ষে, ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবো।
বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ৫টি জেলায় নির্বাচনি জনসভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন। আজ প্রথমে তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিরাপদে থাকার নির্দেশনা দেন।
আসন্ন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে শেখ হাসিনা টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, যশোর, পাবনা ও পঞ্চগড়ের নির্বাচনি জনসভায় সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন এবং নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্ট সভাগুলোতে নৌকার প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সময় স্বল্পতার কারণে অন্যান্য দিনের মতো আজ শুধু তিনি নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করে দেন।
শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এ দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারে সরকার জনগণের সেবক। সরকার জনগণের মঙ্গল করতে পারে। কারণ আমাদের পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা লুটপাট, দুর্নীতি, ছাড়া, মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। একটার পর একটা কু হয়েছে আর মানুষ হত্যা করেছে। এ ছাড়া আর কিছুই করেনি।’
‘আওয়ামী লীগ একমাত্র দল, যে দল জাতির পিতা নিজের হাতে গড়ে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন। যে দল জনগণকে সংগঠিত করে বাংলার মানুষকে উদ্ধুর্ধ্ব করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। কাজেই এই আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলার মানুষের উন্নয়ন হয়। আর সেই উন্নয়নের ছোঁয়াটা জনগণ পায়, সেটা আজকে জনগণ পাচ্ছে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের টানা মেয়াদে নির্বাচনি ইশতেহারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজ সত্যিই বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান বদলাতে শুরু করেছে। মানুষ এখন সুন্দর জীবন পাচ্ছে এবং আরও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে।’
সরকারের মেয়াদে দারিদ্র্যের হার হ্রাস থেকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এই ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনের যে ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছি। এই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশকে আরও আগামী ৫বছর আমরা আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবো।’
টাঙ্গাইলবাসীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনি নৌকা মার্কা জয়ী হয় তখনি এদেশের উন্নয়ন হয়। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা মার্কা যখন ২১ বছর পর সরকারে এসেছে তখনই এ দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেছে।’
সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই উন্নয়নের কাজ করতে পেরেছি দাবি করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল, সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আগামীতে যদি আমরা নির্বাচনে না আসতে পারি জয়ী না হয়ে সরকার গঠন করতে না পারি তাহলে এই পদ্মা সেতুর কাজও থেমে যাবে।’
আগামীতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিজয়ী হয়েই সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো, কারণ স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থেকেই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করুক সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এছাড়াও ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে সে আশাবাদও উল্লেখ করেন।’
ডেল্টা প্ল্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা এই প্রকল্প এবং পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কাজেই সে দিকে লক্ষ্য রেখে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে পরেই আমাদের মেগা প্রজেক্টগুলো হবে সেই সঙ্গে সঙ্গে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারার পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ের তৃণমূল পর্যন্ত উন্নয়ন করতে পারবো। তরুণ সমাজ তারুণ্যেও শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এটা আমরা বিশ্বাস করি। এই তরুণ সমাজের মেধা শক্তিকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’
নির্বাচনি প্রচারণার শেষ দিনের দিকটির কথা উল্লেখ করে নৌকার প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে একটা মনে রাখবেন, বিএনপি-জামায়াত তারা কিন্তু সবসময় সন্ত্রাস করে। তার জন্য প্রত্যেককে নিরাপদে চলতে হবে। একটা সুন্দর পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেই দিক দেখতে হবে এবং প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্র আপনাদের পাহারা দিতে হবে। যাতে ওরা কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে। কারণ ওদের চরিত্র বদলায় নাই। ওরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। মানি লন্ডারিং করে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেহ হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ওরা অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে খালেদা জিয়া ও তার ছেলেরা মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত। এরা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত। এরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।’
এসময় বিএনপি-জামায়াতের নাম উল্লেখ করে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ৫ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ১৪১ জনকে আহত করেছে। ১৭০ টি নির্বাচনি কার্যালয় এবং আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে আক্রমণ করেছে। ৫৪টি স্থানে বোমা ও পেট্রোল বোমা হামলা করেছে। ৬১টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। চারটি স্থানে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। কাজেই এরা যেন আর কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারে। নৌকা মার্কাই একমাত্র উন্নয়ন দেবে, সমৃদ্ধি দেবে। এই সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ; বিএনপি এরা ধানের শীষে ভোট চায়। এদের কোনমতেই ভোট দেওয়া যাবে না। নৌকা শান্তি দেয় উন্নয়ন দেয় নৌকা এগিয়ে নিয়ে যায়। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আবার যেন সরকার গঠন করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি। আমি সেটাই আপনাদের কাছে চাই।’
সারাবাংলা/এনআর/এমও