।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দৃশ্যত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চললেও চট্টগ্রামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ৩ বিএনপি নেতা ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যাননি। ওই তিন প্রার্থী হলেন- চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। ট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
এদের মধ্যে একজন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নিজ বাড়ির আঙিনায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে। আরেক প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেছেন, `ভোট দেওয়ার জন্য বের হলেও বাধা পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে গেছেন।’
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর মেহেদীবাগে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ি আঙিনায় মিষ্টি রোদের মধ্যে চেয়ার পেতে বসে গল্প করছেন কয়েকজনের সঙ্গে। ভোট দিতে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট তো রাতেই হয়ে গেছে, এখন গিয়ে কী করব।’
আমীর খসরু সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোট হয়েছে রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে যেটা হচ্ছে, উচ্ছিষ্ট বা অবশিষ্ট যেগুলো আছে সেগুলোও দখলে নেওয়ার চেষ্টা। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে ভোটের এরকম চিত্র জনগণ অতীতে কখনও দেখেনি।’
‘আমি ভোট দিয়ে লাভ কী! যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারছে না, সেখানে আমার ভোটে কি হবে? গ্রেফতার করা, জেলে নেওয়া, মারধর করা, গুলি করা- নির্বাচনের নামে এই প্রহসনের দরকার কি ছিল? ক্ষমতাসীনারা দেশটাকে নষ্ট করেছে, এখন সমাজের সহাবস্থানটাকেও নষ্ট করছে। যে যে দলই করুক, আমরা সবাই তো এক সমাজে বসবাস করি। সকালে ঘুম থেকে উঠে একজন আরেকজনকে মুখ দেখাবে কিভাবে?’
পরপর তিনবার নির্বাচিত এই সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমার আসনে সকাল ৯টায় এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। আমি তো শতভাগ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত এজেন্ট পাঠিয়েছিলাম। তাদের অনেককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
আবু সুফিয়ান নগরীর চান্দগাঁও থানার সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের ভোটার। সুফিয়ানের দাবি, সকাল থেকে এই ভোটকেন্দ্র অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকের ৮ জন এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।
সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ভোট দিতে বের হয়েছিলাম। কাছাকাছি যাওয়ার পরে শুনি, কেন্দ্র অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এরপরও যাওয়ার চেষ্টা করলে আমাকে বাধা দেওয়া হয়। তখন আমি বাসায় ফিরে এসেছি।’
চট্টগ্রাম-৮ আসনের বোয়ালখালী উপজেলায়ও বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবু সুফিয়ান।
দুপুর পর্যন্ত আবদুল্লাহ আল নোমানও ভোট দিতে যাননি। তিনি নগরীর কাজির দেউড়িতে ভিআইপি টাওয়ারের বাসায় আছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বিএনপি নেতা। তবে নোমান এবং তার প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন আসনের ভোটগ্রহণে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে বিএনপি।
এতে অভিযোগ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম-১০ আসনের লালখান বাজার মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৮টার আগেই ব্যালট পেপারভর্তি ভোটের বাক্স দেখা গেছে। ভোট শুরুর আগেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দেয়।
একই আসনের খুলশী থানার মতিঝর্ণা, পুলিশ লাইন স্কুল, রেলওয়ে স্কুল, পলোগ্রাউন্ড স্কুল, পাহাড়তলী কলেজসহ অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোর থেকেই দখল করে রেখেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তারা। নগরীর পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্র থেকে খুলশী থানার ওসি নিজেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। ১৪ নং ওয়ার্ডের পুলিশ লাইন স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে চাওয়ায় তিনজন ভোটারকে কেন্দ্র থেকে নিয়ে যায় পুলিশ।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের হালিশহর ও বন্দর থানার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে রাতেই ব্যলট পেপারে সিল মেরে রাখা হয়েছে। আগ্রাবাদ সিডিএ কলোনি ভোট কেন্দ্রে প্রায় ৫০টির মতো ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার খবর পেয়েছি। সুনির্দিষ্টভাবে প্রশাসনকে অবহিত করলেও আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। একতরফাভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও