ভোট দেওয়াকে দায়িত্ব মনে করছেন তরুণ ভোটাররা
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক ধরা হচ্ছে তরুণ ভোটারদের। এ বছরের প্রায় সাড়ে দশ কোটি ভোটারের মধ্যে ২২ শতাংশ ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। আর এ বছরই প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন, ১ কোটি ২৩ লাখ ভোটার। তবে তরুণদের মধ্যেই অনেকেই আছেন —যারা দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচনে ভোটার হলেও এ বছরই তাদের প্রথম ভোট।
নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ভোটকেন্দ্রগুলো। শুরুতে অনেকের ভোটার নাম্বার খুঁজে পাওয়া নিয়ে হিমসিম খেতে হয়। কিন্তু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন তারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কেন্দ্রের বাইরে থাকা প্রার্থীদের নিয়োজিত কর্মীদের কাছ থেকে ভোটার নাম্বার সংগ্রহ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
তাদের একজন তাবাসসুম। এ বছরই প্রথম ভোটার হয়েছেন তিনি। ভোট দেওয়ার শেষে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোট দিতে লেগেছে মাত্র দুই মিনিট তবে ভোটার নাম্বার খুঁজতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে গেছে।’ এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই তাবাসসুমের। তিনি বলেন, ‘আশা করছি আগামী নির্বাচনে এইসব বিষয়গুলো আরও নিয়মের মধ্যে আসবে।’
ভোটকেন্দ্রে যারা আছেন তারা শুধু ভোট দিয়েই খুশি না। দাঁড়িয়ে আছেন বন্ধু, প্রতিবেশীদের জন্য। কেউ কেউ ভোট দিতে এসেছে দলবলে। ভোট দেওয়া শেষে আঙ্গুলের দাগের ছবি তোলা, সেলফি তোলা সবই চলছে আড়ম্বরে। এখন মোবাইল ডাটা বন্ধ তো কী হয়েছে, স্মৃতি তো থাকলো, একসময় তুলে দেওয়া যাবে খন!
গত নির্বাচনেই ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন অন্তর বিনতে মুজিব, তবে ভোট দেওয়া হয়নি তার। এ বছর তাই সুদূর আমেরিকা থেকে এসেছেন ভোট দিতে। সারাবাংলাকে জানালেন, ‘আমার দেশ বাংলাদেশ, এখন আমি যে দেশেই থাকি না কেন, দেশ কীভাবে চলবে তার দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’
ভোট দিতে এসে সহসাই দেখা হয়ে যাচ্ছে ভোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে। অন্তরের সঙ্গেও তার বন্ধু সাগুফতা মাহীরের দেখা হয়ে যায় বহুদিন পর। কুশল বিনিময়ের পরেই আলোচনায় আসে দেশের বিষয়টি। সারাবাংলাকে মাহী বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে নির্বাচনে ভোট দেওয়া আমার একটা দায়িত্ব। যেহেতু আমি সংসদে গিয়ে দেশ চালানোর দায়িত্ব নিতে পারছি না তাই ভোট দিয়ে আমি আমার প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠানোর দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করছি।’
বাবা মায়ের সঙ্গে ভোট দিতে এসেছে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ছোটমেয়ে লেখা হক। ভোটের মাধ্যমে তরুণদের নিজেদের পছন্দ প্রকাশের সুযোগ এসেছে। তাদের তো অবশ্যই ভোট দেওয়া উচিত। প্রত্যেকটা মানুষের ভোট দেওয়া উচিত।
বলা হয় এ যুগের ছেলে-মেয়েরা নাকি তাদের সব তৎপরতা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই দেখায়। এই বক্তব্য মানে না, খোদ তরুণরা। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র-২-এ আসা তরুণ ভোটার আকিব বলেন, আমাদের নিজেদের অধিকারের দাবি তুলতে হবে, আর এই কাজের জন্য সবচেয়ে সঠিক উপায় হচ্ছে ভোট দান। আমরা যদি ফেসবুকে বসে বসে স্ট্যাটাস দেই তাতে কোনো পরিবর্তন হবে না। আমাদের নিজেদের অধিকার জানতে হবে আর তা প্রয়োগ করতে হবে। এভাবেই পরিবর্তন হবে।
তরুণদের এই ভোটের জোয়ারে এবং প্রিজাইডিং অফিসাররাও অনেকে তরুণ। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র-১-এ থাকা তরুণ প্রিজাইডিং অফিসার মো. মামুনুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোট পরিচালনার মতো রাষ্ট্রীয় কাজে দায়িত্ব পালন করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। আমার কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সবাই উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়মের অভিযোগ শুনিনি।’
জাল ভোট পড়তে পারে এমন আশঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যেই। তরুণ ভোটার তন্ময় বলেন, ‘ভোট দিতে আসতে একটু বেলা হয়ে গিয়েছিল। ভাবছিলাম কেউ হয়তো জাল ভোট দিয়ে দেবে, কিন্তু ভোট দিতে এসে দেখেছি পরিবেশ খুব ভালো, ভোট দিতে পোলিং অফিসাররা অনেক সহায়তা করেছেন।’
তরুণদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নির্বাচন থেকে আপনারা কী চান? সব তরুণ একবাক্যে জবাব দিয়েছেন তারা বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখতে চায়, দেশের শান্তি চায়। তারা চায় প্রার্থীরা যেন সংসদে গিয়ে সত্যিকার অর্থে তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ভোট দেওয়া শেষ, তবে শেষ হয় না তরুণদের উৎসব। দল ধরে ছবি তোলা, আশপাশের রেস্টুরেন্ট যেটা খোলা পাওয়া যায় তাতেই জুড়ে যায় আড্ডায়। এমনকি বাড়ি গিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেওয়া আর আলাপের মধ্য দিয়ে দিনভর জমিয়ে রাখে তারা নির্বাচনি আমেজ।
সারাবাংলা/এমএ/এমআই