বিজয়ের উচ্ছ্বাসে প্রতিপক্ষকে অপদস্থ করবেন না: নওফেল
৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:২৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দাবি করেছেন, বিএনপির সমর্থকরাও চাননি উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত হোক। এজন্য অনেক বিএনপি সমর্থক ভোটদানে বিরত থাকায় ভোটে দলটির ‘টার্ন আউট’ কম বলে মনে করেন নওফেল।
সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর কেসি দে রোডে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে সবধর্মীয় প্রার্থনা সভায় যোগদান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বিজয়ের আবেগে প্রতিপক্ষকে অপদস্থ না করার নির্দেশ দেন দলের নেতাকর্মীদের।
নওফেল বলেন, ‘বিএনপির অনেক সমর্থকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারাও চায়নি উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত হোক। তারা জানত, তাদের দল ক্ষমতায় আসলে উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ এখন বিএনপি আর জামায়াত এক। একটা আশঙ্কা বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ছিল। তারা ভোটদানে বিরত ছিলেন। তাই তাদের টার্ন আউট ছিল কম।’
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন চালানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে নওফেল বলেন, ‘বিএনপি অত্যন্ত প্রতিশোধপরায়ণতা দেখিয়েছিল। হাজার হাজার সংখ্যালঘু পরিবারকে নির্যাতন করে দেশছাড়া করেছে। এ কারণে দেশের শান্তিপ্রিয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা চেয়েছেন, আওয়ামী লীগেই ক্ষমতায় আসুক। সেজন্য আমরা বেশি ভোট পেয়েছি।’
সমর্থকরা চাইলেও বিএনপি নেতারা নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন না দাবি করে নওফেল বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) অনেক প্রার্থী প্রচুর ভোট পেয়েছেন। সমর্থকরা চেয়েছিলেন নির্বাচন করতে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা চাননি। তারা চেয়েছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। তারা আগে থেকে বলেছিল, নির্বাচন আন্দোলনের অংশ। আমার প্রশ্ন নির্বাচন আন্দোলনের অংশ হয় কি করে? তারা ভোটে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলনের উছিলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।’
বিজয়ের পর এখন আওয়ামী লীগের মূল কাজ দেশের উন্নয়ন এবং ইশতেহার বাস্তবায়ন করা বলেও জানান নওফেল।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাত হোসেনকে পরাজিত করেছেন বন্দরনগরীর সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল।
বিজয়ের পর প্রথম নির্বাচনী কার্যালয়ে এলে নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এসময় একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান।
তবে বিজয়ের উচ্ছ্বাসে প্রতিপক্ষকে অপদস্থ না করার আহ্বান জানিয়েছেন নওফেল।
প্রার্থনা সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুশঙ্খল কর্মীবাহিনী। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে নেত্রীর নির্দেশ পালন করব। কোথাও যেন কোনো ধরনের নাশকতা-সহিংসতা না হয়। একইভাবে আবেগ-উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়িও যেন না হয়। অপরপক্ষকে যেন কোথাও কোনোভাবে অপদস্থ করা না হয়। প্রতিশোধপরায়ণতার মনোবৃত্তি যেন না থাকে। এই ধরনের কাজ আমরা যেন না করি।’
‘এই বিশাল বিজয়ের পর আমাদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা কোন উচ্ছ্বাস করব না। আমরা কোন উদযাপন করব না। আমরা উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে কোন বিশৃঙ্খলা করব না। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা ওঁৎ পেতে আছে। তারা যে কোন সময় সহিংসতা ঘটাতে পারে, নাশকতা ঘটাতে পারে।’
‘বিজয়ের গুরুদায়িত্ব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।’ বলেন নওফেল
পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্বারোপ করে নওফেল আরও বলেন, বড় ধরনের কোন প্রাণহানী ছাড়া, সকল ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার জনগণের ম্যান্ডেট তৃতীয়বারের মতো নিয়ে হ্যাটৃক বিজয় করেছেন। আগামী পাঁচ বছর জনগণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করবে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা লাগবে।
সবধর্মীয় প্রার্থনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।
সারাবাংলা/আরডি/একে