যোগ্য প্রার্থী ছিল না, বিএনপির দোষেই ৭ আসন পেয়েছে: শেখ হাসিনা
৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে না পারায় নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
গণভবনে ৩০ দেশের পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা এই মন্তব্য করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মোহাম্মদ এ আরাফাত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছে। এটা তাদের দোষেই হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি-সন্ত্রাস তাদের ভরাডুবির কারণ। মানুষ আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে ভোট দিয়েছে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে তাদের জবাব দিয়েছে।’
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটে কোনো কারচুপি হয়নি। কেউই যদি প্রমাণ করতে পারে কারচুপি হয়েছে। তাহলে পুনরায় ভোট হতে তো আমাদের আপত্তি নেই।’
ভোটের সময় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অগণিত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। আমার তো মনে হয় অনেক ব্যবহার করলে ইন্টারনেট এমনিতেই স্লো হয়ে যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের জন্য রাজনীতি করলে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। আজকের পরাজিতরা যদি জনগণের জন্য রাজনীতি করে তাহলে তারাও আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারে।’
বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ বিষয়ে আল জাজিরার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখুন। নির্বাচনের পরে কয় ঘণ্টা পার হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমরা কিন্তু এখনও প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরূপ কোনো আচরণ করিনি। অথচ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত আমাদের কর্মীদের মেরেছিল। নারীদের ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। আমাদের অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা কিন্তু তেমনটা করিনি। আমাদের নেতাকর্মীরা বিরোধী দলকে কোনো হয়রানি করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি সবাইকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। আলোচনা করেছি। তাদের দাবি শুনেছি। যাতে করে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে আমাদের কর্মীদের হত্যা করেছে। নির্যাতন চালিয়েছে। আগুন লাগানো, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা বিএনপি-জামায়াতের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা কখনোই মেনে নেব না।’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভিসা জটিলতা, ভিসা না দেওয়া তাদের আসতে না দেওয়া বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই রাজনৈতিক দলের সদস্য। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের কারণে তাদের আসতে দেওয়া হয়নি।’
এই সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘এনফ্রেল বাংলাদেশের নির্বাচনের আগের দিন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতির ভাষা, মর্যাদাহানিকর। তাদের বিবৃতি, ভুল তথ্য ও অনুমান নির্ভর। এনফিল্ডের লোকাল চ্যাপ্টার হচ্ছে অধিকার। অধিকারের চেয়ারম্যান আদিলুর রহমান। এনফিল্ড ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে অ্যাডভোকেসি করছিল। তারা ভুল জায়গায় অ্যাডভোকেসি করেছে।’
সাংবিধানিক ধারা অনুসারে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বর্তমানে বা পূর্বে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবে না।
{উল্লেখ্য, শনিবার এনফ্রেল ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৫টি সংগঠন নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার নাগরিক সমাজ, বিরোধীদল ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দমনমূলক অভিযান চালিয়েছে। এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কোন প্রকারের আভাস পাওয়া যায়নি।}
নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কমিশন স্বাধীন। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগ তদন্ত করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তারা যদি তদন্ত করতে গিয়ে নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণায় এক মাস দেরি করতে চায় তাহলে তারা এটা করতে পারে। তাদের এ ক্ষমতা রয়েছে।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনার প্রত্যাশা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করছি। তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আমার প্রত্যাশা, তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া। তারা কতদিন অন্য একটি দেশে শরণার্থী হিসেবে জীবন যাপন করবে?’
‘আন্তর্জাতিক মহলের উচিৎ তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা ও একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি।’
সারাবাংলা/এনআর/একে