Thursday 15 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওষুধই হবে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক শিল্প


১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:২৬ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:৩৫

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওষুধ ও এর কাঁচামালকে ১৮ সালের ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। গত ১ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন। আর ওষুধশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ শিল্পকে দেশের সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক শিল্পে পরিণত করা হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও বলছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশের সব ধরনের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্টের রফতানিকে কাজে লাগিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-যেটি হবে দেশের সর্বোচ্চ রফতানিকারক শিল্প।

বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ ১৫০টিরও বেশি দেশের বাজারে বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধের বাজার তৈরি হচ্ছে। সে জন্য শিল্পকে বিকশিত করতেই মুন্সীগঞ্জে ওষুধের কাঁচামালের পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। আশা করি, তৈরি পোশাকের মত ওষুধ শিল্পেরও বিকাশ হবে।’

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্মাসেক্টর সরকারের রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতারি হচ্ছে। আর বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এবং কাঁচামালের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য সরকার ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর  এ লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য এপিআই (একটিভ ফার্মাসিটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্স) পার্ক করার জন্য ৪২টি প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ খাত  সরকারের রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৯৮ শতাংশ ওষুধ নিজেরাই উৎপাদন করছে।’

দিনকে দিন ওষুধ রফতানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ৯৫ টি দেশে ৭৩৩ কোটি টাকার, ২০১৫ সালে ১১৩টি দেশে ৮১২ কোটি টাকার, ২০১৬ সালে ১২৭টি দেশে ২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার এবং ২০১৭ সালে ১৪৫টি দেশে ৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি হয়েছে। একইসঙ্গে ২০২১ সালে বাংলাদেশের সব ধরনের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্টের রফতানিকে কাজে লাগিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে —যেটি হবে দেশের সর্বোচ্চ রফতানিকারক শিল্প।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে জানা যায়, ভ্যাক্সিন, বায়োসিমিলার, ইনসুলিন, অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিভাইলার, হরমোন, স্টেরয়েড, তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পরিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োপিক বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদান হচ্ছে। এর মধ্যে দেশে মোট ৮৫০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মোট ১ হাজার ৪৫৮ জেনেরিক এর ২৮ হাজার ৬৩টি ব্রান্ডের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে।

বাংলাদেশে অ্যালোপেথিক, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানার সংখ্যা ৮৫১টি। এর মধ্যে অ্যালোপেথিক ২৬৬টি, ইউনানী ২৬৭টি, আয়ুর্বেদিক ২০৭টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হার্বাল ৩২টি।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সারাবাংলাকে নাজমুল হাসান পাাপন বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে সস্তায় পৃথিবীর আর কোনো দেশ মানসম্পন্ন ওষুধ দিতে পারে না। বাংলাদেশ কার্ডিও ভাসকুলার ওষুধসহ অনেক জীবনরক্ষাকারী ওষুধ রফতানি করছে। ১৪৫টি দেশে ৬০০ প্রোডাক্টের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। আমরা যদি দাড় করাতে পারি তাহল বাংলাদেশের অন্যতম বড় রফতানিযোগ্য খাত হবে আমাদের দেশের ওষুধ খাত।’

এদিকে, ওষুধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ওষুধ শিল্পকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে শ্রীলংকার বাজার দখল করেছে। আমরা যদি গুণমান বজায় রাখতে পারি তাহলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব।’

একইসঙ্গে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীদের বিপক্ষেও সবাইকে সজাগ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করে স্বাস্থমন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীদের রোধ করতে হবে দেশের স্বার্থে। নয়তো সেটি দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।’

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে/এনএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর