Monday 30 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা


২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৮

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: নতুন বছরেই নতুন সরকারের হাত ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, শুধু প্রবৃদ্ধিই নয়, অন্যান্য সূচকের ওপরও নির্ভর করে অর্থনৈতিক ভিত্তি। ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া সরকারকে নীতি সংস্কারে হতে হবে আরও কঠোর। কর্মসংস্থানবান্ধব বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকারকে দিতে হবে সর্বোচ্চ নজর। ব্যাংক খাতের সংস্কার ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গত পাঁচ মাসে রাজস্ব আহরণে যে ভাটা দেখা দিয়েছে, তাতে আগের মতো গতি সংস্কারে এখনই নজর দিতে হবে। নতুন বছরের প্রথম দিন কয়েকজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে এমন প্রত্যাশার কথা জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ শাখার প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিভিন্ন সূচকে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ পর্যন্ত এসে গেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ম্যানুফ্যাকচারিং ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি সম্প্রতি দেখেছি, সেটা বজায় আছে। তার বড় সূচক হলো, রফতানি প্রবৃদ্ধি। রফতানিতে প্রথম পাঁচ মাসে গড়ে প্রায় ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সেটা শুধু পোশাক খাতে সীমাবদ্ধ নয়, এর বাইরেও এবার ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের যে ম্যানুফ্যাকচারিং, র-ম্যাটেরিয়াল আমদানি সেসব ক্ষেত্রেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কাজেই প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকবে বলেই আমরা আশা করছি।’

প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘আমাদের প্রাক্কলন ছিল ৭ শতাংশের মতো। সেদিক থেকে ৭ শতাংশ তো খুব হাই গ্রোথ রেট। প্রবৃদ্ধির দিক থেকে এর আশেপাশে থাকতে পারা মানেই অর্থনীতি খুব ভালো করছে। প্রবৃদ্ধি ছাড়াও সুষম অর্থনীতির জন্য কর্মসংস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য কর্মসংস্থানবান্ধব বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, তার পথে যে বাধাগুলো আছে, সেগুলোও দূর করতে হবে। সেখানে বিনিয়োগের অর্থায়নে যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দূর করা দরকার। আমাদের যে পলিসিগুলো আছে, তা সংস্কার করতে হবে। এখন যেহেতু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একটি সরকার এসেছে, কঠিন কাজে হাত দেওয়াটা সম্ভব করা উচিত। জনপ্রশাসনকে আরও দক্ষ ও জবাবদিহিতার মধ্যে এনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এগুলো তো সোজা কাজ নয়, কঠিন। তবে এসব কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ঝুঁকি নিতে হয়। এ ধরনের সরকার যাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা আছে, তাদের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব। রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা দেখানো সম্ভব। এগুলো করলে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অর্জন করা তো কঠিন কিছু নয়।’

বিজ্ঞাপন

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে অর্থনীতিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষিতে আউশ আমনের ভালোই ফলন হয়েছে বলে মনে হয়। উৎপাদন তো বেশ ভালোই হয়েছে। শুধু যে জায়গাটায় দুর্বলতা আছে, সেটা হলো বিনিয়োগ-ক্ষেত্রে। বিনিয়োগের দুটি সূচকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইদানিং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল, সেখানে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়নি। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহও আগের চেয়ে কম, ১৫ শতাংশের নিচে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতা আছে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকবে বলেই মনে হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু প্রবৃদ্ধি দিয়ে চলবে না, দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে, তবে হারটা কমে গেছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে, বৈষম্য কিছুটা বেড়েছে। প্রবৃদ্ধিটা তো অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়। এ দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করতে হবে।’

ব্যাংকিংখাতের যে বিশৃঙ্খলা আছে, সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘যারা ঋণ দিচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, তার পাশাপাশি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকেও কার্যকর করতে হবে। ঋণ গ্রহীতার দিক থেকে এখন পর্যন্ত আমরা যে পন্থা অবলম্বন করেছি, সেগুলো তো কাজ করেনি। খেলাপি হয়ে গেলেন, আমরা পুনঃতফসিল করলাম, এ আশায় যে ভবিষ্যতে এটার পুনরাবৃত্তি হবে না, এগুলোতে কাজ হয়নি। এখনও দেখা যাচ্ছে একই খেলাপি বারবার খেলাপি হচ্ছেন। কাজেই খেলাপিদের একটি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা, বিশেষ করে ইচ্ছেকৃত চিহ্নিত খেলাপি যারা আছেন, তাদের তো একটা পেনাল্টির ব্যবস্থা করতে হবে।’

প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘প্রথমেই নতুন সরকারকে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে সেটা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চলাফেরা-নিরাপত্তা সর্বক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। জিডিপি, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশকিছু জায়গায় দুর্বলতা আছে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। আমি মনে করি, এই দু’টি বিষয়ে বড় দুর্বলতা রয়েছে। সে দুর্বল দিকগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন সরকারকে কাজ করতে হবে। নতুন বছরে নতুন সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা করি।’

ড. নাজনীন বলেন, ‘নতুন সরকারকে রাজস্ব আদায়ে আরও মনযোগ দিতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে একটু ভাটা ছিল, আগামীতে ব্যবসা-বাণিজ্য ঘিরে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে প্রত্যাশা করি। রফতানি ও রেমিট্যান্সের যে প্রবৃদ্ধি, তা ধরে রাখতে স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। নতুন সরকারের কাছে নতুন বছরে যে প্রত্যাশা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক চাওয়া-পাওয়া, সেগুলো যেন কোনোভাবেই রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়া দিয়ে ব্যাহত না হয়। বরং রাজনীতি যেন অর্থনীতি সহায়ক হয়। এ কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে সরকারকে মোটাদাগে মনোযোগ দিতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছে। সেটা যদি থাকে, পাশাপাশি ইশতেহারের প্রতিজ্ঞাগুলো যদি তারা মাথায় রাখেন, তাহলে এগুলো অর্জন করা সম্ভব।’

নতুন বছরেই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এ বছর প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের কারণে গত ১০ বছরে অর্থনৈতিক খাতে যে অগ্রগতি হয়েছে, সামাজিক রূপান্তর ঘটেছে, তা আরও শক্তিশালী হবে। বর্তমান সরকারের হাত ধরে অর্থনীতির ভিত হবে আরও মজবুত। অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। ভবিষ্যতে সামাজিক সুরক্ষা বলয় আরও শক্তিশালী হবে।’ ব্যাংক ও বীমার ক্ষেত্রে সুশাসন ও সংস্কারেরও আশা করেন তিনি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএনএইচ

৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর