সাবেক স্ত্রীর মামলায় ‘বিপর্যস্ত’ পরিবারটি ডিএমপির সহায়তা চায়
২ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৮
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বিবাহ বিচ্ছেদের পরও সাবেক স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে মামলা করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। এই মামলার জের ধরে সাবেক স্বামীর বোনের দেড় বছরের সন্তানের মৃত্যুও হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ ওঠা নারীর নাম ডা. আয়শা সিদ্দিকা জুঁই। তার দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সহযোগিতা চেয়েছেন আয়শার সাবেক স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মোহাম্মদ আরিফ।
ইঞ্জিনিয়ার আরিফের করা ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার বাদী আয়শা সিদ্দিকা জুঁইয়ের সঙ্গে আরিফের বিয়ে হয়। ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই আইনিভাবে উভয়ের মধ্যে তালাক হয়। তালাক নিবন্ধনের ১৬ দিন পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ), ১০ ও ৫৭ ধারাসহ মোট পাঁচটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেন জুঁই। এসব মামলায় আসামি করা হয় আরিফ, তার বাবা, মা, ছোট বোন ও বোনের স্বামীকে। এর মধ্যে আরিফ ও তার বোনের স্বামীকে কারাগারেও যেতে হয়েছে এসব মামলায়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ওই সময়ের পুলিশ কমিশনারের কাছে সুবিচার চেয়ে আবেদন করেন আরিফ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তালাকপ্রাপ্ত হয়ে হিংসা আর ক্রোধের কারণে এমন মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ফলে আদালত সব মামলা খারিজ করে দেন।
এদিকে, জুঁইয়ের দায়ের করা রমনা থানার ওই মামলায় (মামলা নম্বর ৩০, তারিখ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪) আরিফের বোনের স্বামীকে কারাগারে যেতে হয়। সেসময় গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন আরিফের বোন। এ কারণে ওই বোনের দেড় বছরের একমাত্র অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ আরিফের।
আবেদনে আরও বলা হয়, মামলায় হেরে গিয়ে গত চার বছর ধরে মামলার বাদী ফের আরিফকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। বিয়ে না করলে মিথ্যা মামলা দেওয়া বলেও হুমকি দেন তিনি। হুমকি পেয়ে আরিফ বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে আয়শা সিদ্দিকা জুঁই গত ৩ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় বাদী হয়ে আরিফ ও তার পরিবারের সবাইকে আসামি করে আবারও মামলা করেন। যৌতুক দাবির অভিযোগে দায়ের করা এই মামলার নম্বর ১০। ২০১৪ সালে রমনা থানায় দায়ের করা যৌতুকের মামলার এজাহার হুবহু নকল করা হয়েছে নতুন মামলার এজাহারে।
ডিএমপি কমিশনারের কাছে ইঞ্জিনিয়ার আরিফের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, জুঁই প্রকাশ্যে দাবি করে, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ঢাকা শহরের সব থানা থেকে খুন, ধর্ষণ, মাদক, এমনকি জঙ্গি মামলা দেওয়া তার কাছে কোনো ব্যাপার নয়। পল্টন, রমনা, শাহবাগ, কোতোয়ালি এবং সবশেষ মোহাম্মদপুর থানার মামলায় যার প্রমাণ হয়। নতুন করে মামলা হওয়ায় আরিফের বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আরিফের ছোট বোনও পারিবারিক কলহের শিকার হচ্ছেন মামলার কারণে। তার প্রথম সন্তানটি চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। সব মিলিয়ে গোটা পরিবার গ্রেফতার আতঙ্কে দিন পার করছে। এরই মধ্যে নিরাপত্তার আশঙ্কায় মামলা হওয়ার আগেই আরিফকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে তার পরিবার।
আবেদনে আরিফ উল্লেখ করেন, ‘আমি বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করেছি। গত ছয় বছর ধরে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। মিথ্যা মামলায় যাতে একটি পরিবার যেন ধ্বংস না হয়, সেজন্য যথাযথ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আয়শা সিদ্দিকা জুঁই সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনা যাই ঘটুক, মামলা করার অধিকার রয়েছে আমার, তাই মামলা করেছি।’ আগের মামলা খারিজ হওয়ার পরও একই মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একই মামলা হলে তো পুলিশ মামলা গ্রহণ করত না।’
এ বিষয়ে অনলাইনে কথা হয় বিদেশে পালিয়ে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মোহাম্মদ আরিফ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার ওই নারীর হাত থেকে বাঁচতে চাই। তার জন্য আমার সব শেষ হয়ে গেছে। তার সব মামলা আদালত খারিজ করার পরও চার বছর পর যৌতুকের মামলা দিয়েছে।’
মামলাটির বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, তদন্ত করে যা পাওয়া যাবে সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন দেওয়া হবে। স্বাভাবিকভাবে কেউ মামলা করতে এলে যেভাবে মামলা নেওয়া হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ওই নারী ক্ষমতার কারণে মামলা নেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ সঠিক নয়।
সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন/টিআর