২৯ ডিসেম্বর কালো রাত, ৩০ ডিসেম্বর অন্ধকার দিন: রিজভী
২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:০৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের রাতটিকে ‘কালো’ এবং ভোট গ্রহণে দিনটিকে অন্ধকার দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ভোটের দুই দিন পর বুধবার (০২ জানুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর রাত কালো রাত, ৩০ ডিসেম্বর দিন অন্ধকার দিন। ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মানবশূন্য কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির নির্বোধ উল্লাসে মেতে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নের ওপর ধেয়ে এলো মহাদুর্যোগ। ভোটের দিন বিশ্ববাসী মহাশঙ্কা নিয়ে দেখল বিজিবি-র্যাব-পুলিশ কর্তৃক দেশের জনগণের আত্মমর্যাদাবোধে অসম্মানের দৃশ্যটি।’
‘তারা দেখল ভোটাধিকার বঞ্চনার শেষ দৃশ্যটি। রাতের আঁধারে কেন্দ্রে-কেন্দ্রে অকটেন ও ডিজেল পোড়া ধোঁয়া। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানো। এই সংবাদ নির্বাচনের আগের রাত ১১ টায় আমি আপনাদের ব্রিফিং করে জানিয়েছিলাম’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
‘মিথ্যা জয়ের জন্য ভোট জালিয়াতি করতে পানির মতো টাকা খরচ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে’— এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই একতরফা নির্বাচনের মুখ্য উপাদান হিসাবে কাজ করেছে। ফলে বাংলাদেশে আর গণতন্ত্রের গৌরবোজ্জ্বল যুগ সৃষ্টি হলো না।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার দল মানুষের ভোটে জেতেনি, জিতেছে গায়েবি ভোটে। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে নতুন গভর্নমেন্ট তৈরি হবে তা হবে গভর্নমেন্ট অব দি বিজিবি বাই দি র্যাব, ফর দি পুলিশ। এই মহাডাকাতি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে এরা ক্রমান্বয়ে উপহাস করছে। আওয়ামী নেতারা এখন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের চাপাবাজি ও গলাবাজির জোরে ভোট নিয়ে মহা-জালিয়াতির ঘটনা আড়াল করতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে চোখে কিছুই এড়িয়ে যায়নি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ১৯৭৩ সালের খারাপ নির্বাচনের চাইতেও কুৎসিত।’
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর দেশ আরও একধাপ তমসাচ্ছন্ন বর্বর যুগে প্রবেশ করলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের নামে নিষ্ঠুর রসিকতা করে এখন জনপদের পর জনপদে ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর চলছে পৈশাচিক বর্বরতা। মুর্খের অহংকারে আক্রমণ করে ভেঙে ফেলা হচ্ছে নিরীহ মানুষের বাড়ি-ঘর-দোকানপাট-বাজার। করা হচ্ছে অগ্নিসংযোগ।’
তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া করার রীতিমতো হিড়িক পড়েছে। নানা হয়রানীসহ শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। আক্রমণে অনেকে নিহত হয়েছেন। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান-কৃষি খামার-সহায়সম্পদের ওপর বেপরোয়া হানা দেওয়া হচ্ছে অবিরাম।’
রিজভী বলেন, ‘সবচেয়ে মর্মস্পর্শী শ্বাসরোধী ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। সেখানে এক সিএনজি চালকের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ১০/১২ জনের এক দল কর্মী নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার মধ্যব্যাগারে ৪ সন্তানের মা সিএনজি চালকের স্ত্রীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বলে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে মহিলাটি সবার সামনে ধানের শীষে সিল দেয়। এরপর রাত ১০ টার দিকে সন্ত্রাসীরা পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে গৃহবধুটির হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে ঘরের পাশে ফেলে যায়।’
‘এটি শুধু একজন ব্যক্তিকেই পৈশাচিক নির্যাতনে শ্লীলতাহানি নয়, যেন জনগণের ভোটাধিকারকেই শ্লীলতাহানি করা হলো’— বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘সিএনজি চালকের স্ত্রীর ক্রন্দনবিধুর অন্তহীন আর্তি বিশ্ব বিবেককে কাঁদিয়েছে। বাংলাদেশে মানবতা এখন কাঁদছে। বিশ্ব মানবতা এই ঘটনায় স্তম্ভিত-শিহরিত ও বিমুঢ়। কালো টাকার প্রাচুর্য প্রয়োগে বেড়ে ওঠা এই আওয়ামী নির্যাতনকারীরা জাল-জালিয়াতি ভোটের মহাযজ্ঞের পর এখন কাণ্ড-জ্ঞানহীন নিষ্ঠুর বেপরোয়া। এরা ভোট ডাকাতির মহাসাফল্যে সহজাত বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে।’
সারাবাংলা/এজেড/একে