সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার শুরুর দাবি
২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:৫১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য চার বছর আগেই তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও বিচার কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাসংশ্লিষ্ট ও বিচারপ্রার্থীরা।
দল হিসেবে জামায়াতের বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সদস্য সানাউল হক বলেন, ‘এটা প্রসিকিউশনকে জিজ্ঞাসা করুন। আমরা চার বছর আগে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। তারা কেন অভিযোগ গঠন করেন না, এটা আমরা বলতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হিসেবে আমরা মনে করি, যেকোনো উপায়ে হোক, জামায়াতের বিচার হওয়া দরকার।’
জামায়াতের বিচার শুরু বিষয়ে প্রায় অভিন্ন মত জানালেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. আব্দুল হান্নান খান। মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিনটি অঙ্গ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বিচারিক বিভাগ, যেখানে রয়েছেন বিচারকেরা। দ্বিতীয়তটি হলো, আদালতে মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউশন। তৃতীয়টি হলো, তদন্ত সংস্থা। আমাদের কাজ হলো, মামলাটি তদন্ত করে তা রিপোর্ট আকারে প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করা। প্রতিবেদন দাখিল করার পর তার ওপর তদারকি করা আমাদের কাজ নয়।’
মো. আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘২০১৪ সালে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করেছি। এরপরও কেন হচ্ছে না প্রসিকিউশনই ভালো জানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া, বিভিন্ন বিচারিক রায়েও জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। সর্বশেষ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জামায়াতের বিচারটি অবিলম্বে সুরাহা হওয়া উচিত।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা আপিল বিভাগে ঝুলে থাকার বিষয়ে আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘আপিল বিভাগে শত শত মামলা আছে। এখন কোন মামলার গুরুত্ব দিয়ে শেষ করা দরকার, সেটা সরকারের দেখা উচিত।’
জামায়াতের বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগেও আমরা সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের বিচারের দাবি করেছি। এখন নতুন সরকার এসেছে। আমরা আশা করছি, তারা দ্রুত এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেবে।’
এ মামলার সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘একাত্তরে অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য প্রসিকিউশন পক্ষ প্রস্তুত। এখন শুধু আইন সংশোধনের অপেক্ষা।’ তিনি বলেন, ‘সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার আইন সংশোধনের জন্য আটকে আছে। ব্যক্তির বিচারের পাশাপাশি সংগঠনের শাস্তি কী হবে, তা নির্ধারণে আইনটির সংশোধন প্রয়োজন। আইন মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধন করে দিলেই জামায়াতের বিচার শুরু হবে।’ নতুন সরকারের আইন মন্ত্রণালয় শিগগিরই আইনটি সংশোধন করবে বলেও তিনি আশা করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। এরপর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
এরপর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে গত ২৮ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর একই বছরের ২৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়। সে তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াতের দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশও করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমএনএইচ