ড. কামালেও ভরাডুবি, বিএনপিকে কথা শোনাচ্ছে শরিকরা
৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২৬
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং রাজনীতির বাইরে থেকে এসে ধানের শীষের ‘ত্রাণকর্তা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরদের শলা-পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটে গিয়ে নজিরবিহীন ভরাডুবির পর বিএনপিকে কথা শোনাচ্ছে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা।
শরিকরা বলছেন, ভোটের দুইদিন আগে ‘বিজয়’ দেখে ফেলা, ৩০ তারিখে ‘ভোট বিপ্লব’র স্বপ্ন দেখানো এবং বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আরেকটি বিজয় দিবস পালনের ‘আকাশ-কুসুম’ চিন্তা ছড়িয়ে দিয়ে ড. কামাল হোসেনরা মূলত সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা বিএনপিকে ভোটের মাঠে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু ‘রাজনৈতিক দূরদর্শিতা’র অভাবে ভোটের ফল বিএনপি-জোটের অনুকূলে আসেনি।
বিএনপির ২৪১ আসনের বিপরীতে মাত্র পাঁচটি আসন এবং গণফোরামের সাত আসনের বিপরীতে দুইটি আসনে বিজয়কেও সন্দেহের চোখে দেখছে ২০ দলীয় জোট। সে কারণেই ধানের শীষের নজিরবিহীন ভরাডুবির পর গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিএনপিকে কথা শোনাচ্ছে পুরনো মিত্ররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভোটের পরের দিন সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম মূল্যায়ন সভায় ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এবং জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তার বেশ কিছু বিষয়ে বিএনপির কাছে কৈফিয়ত তলব করেন।
মোস্তফা জামাল হায়দার বৈঠকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব দিয়েছেন, তাতে আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমরা লক্ষ্য করেছি বরাবরই ২০ দলকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব সিদ্ধান্ত যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে হয়, তাহলে ২০ দলীয় জোট রাখার কী দরকার?’
ঢাকা-৬ আসনে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৭ আসনে মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং ঢাকা-১৮ আসনে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘আমি দুইটি আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমাকে মাত্র একটা আসন দেওয়া হলো। অথচ ঢাকায় এমন সব ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যারা এই আসনগুলোর জন্য যোগ্য কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
সূত্রমতে, জোট শরিকদের এ ধরনের সমালোচনা, কৈফিয়ত তলব এবং প্রশ্নের জবাবে জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন এবং প্রতিটি বিষয় নোটবুকে লিখে রেখে জোটের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনার আশ্বাস দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোটের পর প্রথম মূল্যায়ন সভায় অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। সেখানে জোট শরিকরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। আক্ষেপের কথা বলেছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিয়েছেন। সবগুলো বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। জোটের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি জোটের এক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ২০ দলীয় জোটে আরেক দফা ভাঙন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কিছু দিনের মধ্যে অনেকেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে যাবে। আপাতত সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
সারাবাংলা/এজেড/একে