Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের


৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩০

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্থাপিত সব অনিয়ম ও অভিযোগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বুধবার (২ জানুয়ারি) সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলের ওপর হামলা, ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোট কারচুপি ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনি প্রচারণার সময় ঘটেছে সহিংসতার ঘটনা, বিরোধী দলীয় কর্মীদের গণগ্রেফতার ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর চালানো হয়েছে দমনমূলক অভিযান। এসব ঘটনার পরও নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করেছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন স্বাধীন ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলীয় জোট নির্বাচনটিকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছে।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন, বিরোধী দলের প্রচারণা অনুষ্ঠানে হামলা এবং আইনের অপব্যবহার করে স্বাধীন মতপ্রকাশ সীমিত করার ঘটনার কারণে এ নির্বাচন বিতর্কিত।

তিনি আরও বলেন, ব্যালট সিল মেরে রাখা, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন ও ভোটগ্রহণের দিনে ভোটকেন্দ্রগুলো ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে থাকার অভিযোগগুলো একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে তদন্ত করা উচিত।

বিজ্ঞাপন

এইচআরডব্লিউ বলেছে, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান ব্যাহত হয়েছে। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপি জানিয়েছে, নির্বাচনের দিন ২২১টি নির্বাচনি আসনে তাদের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, নির্বাচনের দিন অনিয়মের অভিযোগগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। পুলিশ প্রধান ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, নির্বাচনি পরিবেশ ‘শান্তিপূর্ণ’ ছিল।

মানবাধিকার সংগঠনটি দাবি করেছে, এসব অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে না দেখে এসব নিয়ে খবর প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের গ্রেফতার করছে কর্তৃপক্ষ। ১ জানুয়ারি ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলা ট্রিবিউন ও প্রবাহ পত্রিকার প্রতিনিধি হেদায়েত হোসাইন মোল্লাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ভোটের দিন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হয়রানির শিকার হয়ে অনেক সাংবাদিক ধারণ করা ভিডিও ডিলিট করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক কাফি কামাল জানান, ভোট গ্রহণের দিন ভোটারদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গেলে তার ওপরও হামলা চালায় আওয়ামী সমর্থকরা।

এদিক, নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পর্যবেক্ষক ও বিদেশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও উল্লেখ করেছে এইচআরডাব্লিউ। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বক্তব্য তুলে ধরেছে তারা। ইইউ জানিয়েছে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বাধা ছিল। এতে নির্বাচনি প্রচারণা ও ভোটদান প্রভাবিত হয়েছে। তারা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের বিবৃতিও তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠনটি। এই দুই দেশের বিবৃতিতেই নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কথা উঠে এসেছে এবং এসব অভিযোগের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) সদস্য দেশ বাংলাদেশ। এই চুক্তির ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, সব সদস্য দেশের নাগরিকের ভোটদানের ও সত্যিকারের সময়ভিত্তিক নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ও সুযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচন সর্বজনীন হতে হবে ও তাতে ভোটদানের সমান অধিকার থাকতে হবে। নির্বাচনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নিতে হবে ও সকল অংশীদারের স্বাধীন ইচ্ছার প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে।

আইসিসিপিআরের এই ধারা উল্লেখ করে অ্যাডামস বলেন, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক দাতা ও বাংলাদেশের মিত্রদের এটা মনে রাখা উচিত, নির্বাচন হচ্ছে ভোটারদের অধিকার প্রয়োগের বিষয়, ক্ষমতাসীনদের নয়। এরকম উচ্চ পর্যায়ে বিভাজিত দেশে কোনো দল যখন ৯৬ শতাংশ ভোট পায়, তখন তাৎক্ষণিকভাবেই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।

সারাবাংলা/আরএ/টিআর

অনিয়ম এইচআরডব্লিউ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর