জাপার বৈঠকে হট্টগোল, তিন মন্ত্রীর তোপের মুখে রওশন
৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫০
।। আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় পার্টির (জাপা) থাকা না থাকা নিয়ে তুমুল হট্টগোল-বাকবিতণ্ডা হয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এক বৈঠকে। বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অসুস্থ থাকায় দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠকে বসেন শীর্ষ নেতারা।
এর আগে দুপুরে শপথবাক্য পাঠ করেন জাতীয় পার্টির নতুন সংসদ সদস্যরা। দুপুরে শপথ নেওয়ার পর তারা বৈঠকে বসেন। তবে পৌনে ১ ঘণ্টার বৈঠকে জাপা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, দলটি সরকারে থাকবে, না বিরোধী দলে থাকবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, শ্রম ও কর্মসংস্থার প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। আগের মেয়াদে মন্ত্রিত্বে থাকা এই তিনজন সুযোগ পেলে এবারও মন্ত্রিপরিষদে থাকতে চান।
বৈঠকে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা মন্ত্রিত্বে থাকতে চাই, মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাই না।’
আরও পড়ুন: সরকার ও বিরোধী দলে থাকছে জাপা
প্রায় একই বক্তব্য রাখেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও। তিনি বলেন, ‘আমরা মহাজোটে আছি। সরকারেও থাকতে চাই, বিরোধী দলেও থাকতে চাই।’
জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আপনারা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেছেন। জাপার জন্য কী করেছেন? জাপার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করেছেন।’
রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা জাপার জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আমরা এগুতে পারিনি। জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ডে যদি সন্তুষ্ট না হন তাহলে দল থেকে আমাদের বের করে দিন।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-৬ এর নতুন সংসদ সদস্য ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আপনারা শুধু একা মন্ত্রিত্বে থাকবেন কেন? দরকার হলে দলের সবাইকে মন্ত্রিপরিষদে নিয়ে নিন।’ এই বক্তব্যের পর তোপের মুখে পড়েন কাজী ফিরোজ রশীদ। বৈঠকে মন্ত্রিত্বে থাকা তিন নেতার সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদের বাকবিতণ্ডা হয়।
তবে দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের জাপাকে সংসদের বিরোধী দলে রাখার পক্ষে মত দেন। দুই কো-চেয়ারম্যানের এই অবস্থানের ফলে মিটিংয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তোপের মুখে পড়েন রওশন এরশাদও।
এ সময় রওশন এরশাদ বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান অসুস্থ। তিনি হুইল চেয়ার ছাড়া চলাচল করতে পারেন না।’
জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আপনিও তো অসুস্থ। এই অবস্থায় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জায়গায় দলের চেয়ারম্যান কে হবেন, কবে নাগাদ নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেবেন, তাও স্পষ্টভাবে জানতে চান।’
এক পর্যায়ে রওশন এরশাদ বলতে বাধ্য হন, ‘ঠিক আছে জাপার সংসদে ও বিরোধী দলে থাকবে।’
তবে সংসদ নেতা ও উপনেতা কে হবে তা পরবর্তী বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে রওশন এরশাদ জানান।
বৈঠকের বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা কে হবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। আশা করি, পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী মহাজোট ও আমাদের লক্ষ্য এক। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা মহাজোটে আছি, মহাজোটে থাকবো।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে/এমএনএইচ