‘আওয়ামী লীগের সন্তান আমি, এ ঘরেই আমার জন্ম’
৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩১
।। মীর মেহেদী হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
‘আওয়ামী লীগের আমি সন্তান, আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যদি ব্যথা পায়, আমিও বুকে ব্যথা পাই, আওয়ামী লীগের যদি কোন কর্মী ব্যথা পায়, আমারও অন্তরে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগ তো আওয়ামী লীগই এটা কোন দল না, এটা আমার কাছে একটা অনুভূতির নাম।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে বলা মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথাগুলো এখনও গেঁথে আছে দলটির সমস্ত নেতা-কর্মীর অন্তরে। ক্যানসারের সাথে লড়াই করে বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। নিষ্ঠাবান ও প্রাণপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আশরাফকে হারিয়ে এখন শোকে মুহ্যমান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সৈয়দ আশরাফের জন্ম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, ঢাকায়। তার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরেই আশরাফ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯৭০ সালে নির্বাচিত হয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। দায়িত্ব পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। সংগ্রাম করেন মুজিব-বাহিনীর সদস্য হয়ে।
১৯৭৫ সালের ৩ই নভেম্বর কারাগারে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যুক্তরাজ্য চলে যান। প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এরপর ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এরপর ২০০১ সালের ১ই অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা বিরাজ করছিল এবং শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন। তখন থেকেই দলের হাল ধরেন আশরাফ। এছাড়াও ১/১১ পরবর্তী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একনিষ্ঠ-ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনেও সৈয়দ আশরাফ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী হিসেবে। এছাড়া, ২০০৯ সালের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বিশ্বস্ততার পুরষ্কার হিসেবে সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরপর দুইবার তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে সংসদ নির্বাচিত হয়ে ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফকে সাধারণ সম্পাদক থেকে অব্যাহতি দিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়। সেই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন দলকে তিনি কতটা আপন ভাবতেন।
অসুস্থতার কারণে আশরাফ গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। দেশে না থেকেও তিনি গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। দীর্ঘ অনেক দিন অসুস্থ থাকার কারণে তিনি নির্বাচনে একদিনের জন্যও ভোটারদের কাছে যেতে পারেননি। তারপরও পঞ্চমবারের মতো আশরাফকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করে কিশোরগঞ্জের মানুষ। আজীবন তিনি যেমন মানুষকে ভালবেসেছেন তেমনি তার অনুপস্থিতিতেও রায় দিয়ে এর প্রতিদান দিয়েছে কিশোরগঞ্জবাসী।
বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারি) নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি থাকতে পারেননি। শপথ নেওয়ার মতো সময় ছিলো তার হাতে, তবু নিয়তির ডাকে আর শপথ নেওয়া হলো না বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের।
তাতে কি? বর্ণাঢ্য জীবন ও বিশুদ্ধ রাজনীতির মানুষ হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে অম্লান হয়ে থাকবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
সারাবাংলা/এমএমএইচ/এনএইচ
আরও পড়ুন: সৈয়দ আশরাফ আর নেই
আরও পড়ুন: সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো: রাষ্ট্রপতি
আরও পড়ুন: সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক