তিস্তা থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২২
।। মাহিদুল ইসলাম রিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দিনাজপুর : উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের নানা ভূমিকায় বাঁচিয়ে রেখেছে তিস্তা, তার জলদুগ্ধে। তাই তিস্তার কাছে এই অঞ্চলের মানুষদের ঋণ চিরদিনের। দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে উত্তরের রংপুর অঞ্চল। খাদ্য শস্যের ভাণ্ডার রংপুর অঞ্চলে প্রতি বছরই বোরো মৌসুম এলে প্রাকৃতিক উপায়ে পানির ব্যবস্থা না থাকায় চাষাবাদে ফসলি জমিতে সেচের চাহিদা থাকে।
সেচ নির্ভর এই মৌসুমে তিস্তার পানি দিয়ে রংপুর বিভাগের তিন জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। তাই এসময় তিস্তার পানির চাহিদা ব্যাপক। উজানের পানি প্রবাহের ওপর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য নির্ভরশীল। বর্তমানে উজানের জোয়ারে তিস্তা পানি প্রবাহ রয়েছে পাঁচ হাজার কিউসেক।
আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে চলতি খরা মৌসুমে বোরো চাষাবাদে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। উক্ত সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদে উত্তরের তিন জেলা নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি শুষ্ক মৌসুমেও তিস্তা নদীর বুকে উজান থেকে আসা পানির স্রোতধারায় জেলেরা শিকার করছে মাছ, বইছে মাঝি নৌকা নিয়ে। গত কয়েক সপ্তাহ আগে পানির গড় প্রবাহ ছিল দেড় হাজার কিউসেক যা বুধবার (২ জানুয়ারি) বেড়ে ৫ হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়।
ইতোপূর্বে কোন এক সময় পূর্ণমাত্রায় যখন তিস্তা নদীর পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমেও প্রায় ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে খরচ হয় সে অনুযায়ী সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ। এছাড়া ধানের ফলনও হয় বাম্পার। বৃহত্তর রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্প অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। উত্তরের জীবনের জন্য তিস্তার পানির কোনো বিকল্প নেই।
গত কয়েক বছর বোরো মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানির অভাব থাকায় কমান্ড এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ৬৫ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি অভাব থাকায় মাত্র ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়। ২০১৫ সালে ৩৭ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়। ২০১৬ সালে যা কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ায় গত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও চাহিদা মতো তিস্তা নদীর পানির পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় কৃষকদের মনে।
তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, আগামী মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে চলতি বোরো মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজে আনুষ্ঠানিকভাবে সেচ প্রদান শুরু করা হবে। সেচ প্রদানের কমান্ড এলাকায় ৭৯ হাজার হেক্টর জমি তৈরি রয়েছে। উজানের পানির উপরই নির্ভর করবে কতখানি এলাকায় সেচ দিতে সম্ভব হবে। চলতি মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর ও নীলফামারী জেলা সদর উপজেলার ৭ হাজার হেক্টর, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলার খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি রয়েছে।
তিনি জানান, তিস্তা নদীতে বর্তমানে যে পরিমাণে উজানের পানির জোয়ার রয়েছে সে অনুযায়ী উক্ত জোয়ার অব্যাহত থাকলে চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদে কৃষকদের ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া জোয়ার বৃদ্ধি পেলে কমান্ড এলাকার ৭৯ হাজার হেক্টর জমি পর্যন্ত সেচ দেয়া যাবে।
ডালিয়া এলাকার সাধারণ জেলে নিয়ামত হোসেন (৪২) জানান, আল্লাহর কাছে সার্বক্ষণিক দোয়া করি তিস্তার বুক জুড়ে সব সময় যেন পানি থাকে। বর্তমানে নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। এই রকম পানি প্রবাহিত হলে আমরা জেলেরা সারা বছর ভালো মাছ পাব।
একই এলাকার সেচ কমান্ড এলাকার কৃষক আরিফুল আলম জানান, কয়েকদিনের মধ্যে কৃষকরা বোরো চাষে ব্যস্ত হয়ে জমিতে চারা রোপণ শুরু করবে। বর্তমানে সেকলগুলোতে পরিপূর্ণ অবস্থায় পানি রয়েছে। ১৫ জানুয়ারি হতে আমাদের সেচ দিবে তিস্তা ব্যারেজ। ক্যানেলে এমন পানি থাকলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদ সুন্দর হবে। আবাদও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এমন পানি আদৌ থাকবে কিনা আশঙ্কাও করছেন এই কৃষক।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তায় এবার উজানের জোয়ার ভালই রয়েছে। এই জোয়ার অব্যাহত থাকলে আমরা টার্গেটের বেশি জমিতে সেচ দিতে পারবো। ফসলি জমিতে সেচ দিতে সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এমএইচআর/এনএইচ