চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে মহেশখালী পর্যন্ত
৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আট বছর পর দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা আবারও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্রমবর্ধমান পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের চাপ সামলাতে এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা এখন সাত নটিক্যাল মাইল। বন্দরের পক্ষ থেকে সেটি বাড়িয়ে ৫০ নটিক্যাল মাইল করার একটি প্রস্তাব গত অক্টোবরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি গেছে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর গেজেট হবে।
প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই বন্দরের যাত্রা শুরুর পর সীমানা ছিল ৫ নটিক্যাল মাইল। পরবর্তীতে আলফা, ব্রেভো এবং চার্লি নামে তিনটি অ্যাংকারেজে বিভক্ত করে বন্দরের সীমানা বাড়ানো হয় ৩১ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত। ২০১১ সালে সেটি বাড়িয়ে সাত নটিক্যাল মাইল করা হয়।
প্রস্তাবিত ৫০ নটিক্যাল মাইল সীমানা অনুমোদন পেলে বন্দরের জলসীমা পতেঙ্গা উপকূলের উত্তরে কাট্টলী থেকে সীতাকুণ্ড এবং দক্ষিণে আনোয়ারার গহিরা থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ঘিরে এলএনজি টার্মিনাল, সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিও প্রাধান্য পাচ্ছে বলে বন্দরসূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য বর্তমানে বছরে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি জাহাজ আসে। এরমধ্যে বন্দরের প্রধান ১৬টি জেটিতে ভিড়তে পারে সীমিত সংখ্যক জাহাজ। অনেক জাহাজকে নোঙ্গর করতে হয় বর্হিনোঙ্গরে।
কারণ নাব্যতা সংকটের কারণে সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজই কেবল চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ঢোকার অনুমতি পায়। এর বড় জাহাজগুলো কুতুবদিয়া কিংবা বহির্নোঙরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। এরচেয়ে বড় জাহাজ কুতুবদিয়ায় আসার পর লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে কিছু পণ্য খালাস করে সেটিকে হালকা করে তারপর বন্দর সীমানায় আসার অনুমতি মেলে।
বন্দর সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, জলসীমা ৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হলে বন্দরের রাজস্ব আদায় বাড়বে দৈনিক অন্ত:ত এক কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানায় অবস্থানকারী জাহাজগুলোকে প্রতি জিআরটি (গ্রস টন) হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দশমিক ২৪ ডলার হারে মাশুল পরিশোধ করতে হয়। প্রতিটি জাহাজকে ৮০০ থেকে ১ হাজার জিআরটি পরিমাপ ধরা হয়।
বন্দর সীমানার বাইরে কুতুবদিয়া হয়ে মহেশখালী পর্যন্ত সাগরে শত শত জাহাজের অবস্থান থাকলেও তাদের কোন মাশুল দিতে হয় না। কিন্তু পুরো এলাকা বন্দরের সীমানায় এলে বছরে তিন’শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রচুর জাহাজ আসা শুরু হয়েছে। আর এমনিতে পণ্যবাহী জাহাজ আসার পরিমাণ তো বাড়ছেই। সব মিলিয়ে বন্দরের সীমানাটা যদি বেড়ে যায়, রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ