শনিবার আসছে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ
৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সদ্যপ্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ দেশে আনা হবে আগামীকাল শনিবার (৫ জানুয়ারি)। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে তার মরদেহ ব্হনকারী উড়োজাহাজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারে।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৪টার একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক থেকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ নিয়ে আসা হবে। তবে দেশের আনার পর তার জানাজা কবে, কখন হবে কিংবা দাফন কোথায় হবে, এসব বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন- ‘আওয়ামী লীগের সন্তান আমি, এ ঘরেই আমার জন্ম’
সৈয়দ আশরাফ বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল।
অসুস্থ অবস্থাতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফ। নির্বাচনের সময় দেশে আসতে না পারলেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তার পক্ষে ভোট চান। নির্বাচনে জয়ীও হন তিনি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিজয়ী সংসদ সদস্যরা স্পিকারের কাছে শপথ নিলেও চিকিৎসাধীন থাকায় শপথ নেওয়া হয়নি সৈয়দ আশরাফের। তিনি স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে শপথ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করেন। শেষ পর্যন্ত সেই শপথ না নিয়েই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।
আরও পড়ুন- সৈয়দ আশরাফ আর নেই
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও চার বার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন সৈয়দ আশরাফ। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। সেখানেও অবশ্য সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয় পান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সৈয়দ আশরাফ। ১৯৯৬ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরে ২০০৮ সালে পান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলেও সেই দায়িত্বেই ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে এসে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
আরও পড়ুন- সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো: রাষ্ট্রপতি
সরকারের মতো দলেও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। ২০০৬ পরবর্তী এক-এগার সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে দলের হাল ধরেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসেন তিনি, থাকেন টানা দুই মেয়াদ। ২০১৬ সালে দলের জাতীয় কাউন্সিলে নিজেই নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরেই তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সারাবাংলা/টিআর