‘সৈয়দ আশরাফের প্রতি আমাদের চেয়ে আপনাদের দরদ বেশি নয়’
৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:১৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ে অন্য কারও দরদ বেশি নয় বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ব্যাপারটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন। নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে বেশি দরদ আপনাদের নেই। আমরা একসঙ্গে ছিলাম, একসঙ্গে আছি।’
শনিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভার সূচনা বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সৈয়দ আশরাফেরর মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার কোনো কর্মসূচি কেন নেই তা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ব্যাপারটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন। নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে বেশি দরদ আপনাদের নেই। আমরা একসঙ্গে ছিলাম, একসঙ্গে আছি, আমাদের নেতাকর্মীদেরও এখানে অনুভূতি আছে। কিন্তু চিন্তা করতে হবে। তিনি কতদিন ধরে একটা হাসপাতালের বেডে অসুস্থ ছিলেন। শরীরের যে অবস্থাটা হয়েছে, এ ধরনের কঠিন ব্যাধির পর সেখানে তাকে এতোদিকে টানাহেঁচড়া করা, এমনতিতেই কিশোরগঞ্জ নিতে হবে, ময়মনসিংহ নিতে হবে। এতোদিকে টানা হেঁচড়া করাটা বোধহয় এই মৃতদেহটার জন্য একটু বেশি হয়ে যাবে।’
‘এইসব অনেক কিছু বিবেচনা করেই প্রোগ্রামটা আমাদের সভাপতি, সৈয়দ আশরাফেরই যিনি রাজনৈতিক অভিভাবক আমাদের নেত্রী প্রোগ্রামটা সাজিয়ে দিয়েছেন এবং সেভাবেই আমরা প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছি। এখানে সৈয়দ আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধার কোন কমতি কারো নেই,’ যোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপি নেতারা বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে এখন বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশকে সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন, এমন প্রসঙ্গের অবতারণা হলে তারও জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ বিদেশিদের কাছে নালিশ করা ছাড়া এখন তাদের আর অবলম্বন কী?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১০ বছর ধরে একটা আন্দোলন করতে পারে নাই। জাতীয় নির্বাচনে তারপরও অংশ নিয়েছে। আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু নির্বাচনেও তারা চরমভাবে ব্যর্থ। আন্দোলনে ব্যর্থ। এখন তাদের আর অবলম্বন কি আছে? নালিশ করা ছাড়া? দেশের লোকের কাছে তো অনেক বলেছে, এখন বিদেশিদের কাছে তারা নালিশ করে যাচ্ছে। সেটা তাদের পুরনো অভ্যাস। পুরনো অভ্যাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এখানে আমাদের কী বলার আছে?’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ একজন রাজনীতিকের অসংলগ্ন সংলাপ বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
এর আগে মহাজোটের বিপুল বিজয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ওবায়দুল কাদের। সেইসঙ্গে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে এবং ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হাতিয়ার দিকে চেয়ে দেখুন, সাংগঠনিকভাবে সমস্যাসঙ্কুল, যেখানে আমরা বারবার চেষ্টা করেও নেতাদের এক করতে পারিনি। সেখানে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে। বারবার ফেইল করেছি। কিন্তু ইস্পাত কঠিন ঐক্য ছিল এবার হাতিয়া সবার আগে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, এক মঞ্চে সবাই। এতো সিমেনটিক ইউনিটি, হাতিয়ার ছিল। নির্বাচনের পরও তারা ইউনাইটেড রয়েছে, এটিই আমাদের পার্টি।’
সাংবাদিকরা অনেক সময় প্রশ্ন করেছিলেন, এই অন্তঃকলহ নিয়ে এতো বড় নির্বাচনে কি করে যাচ্ছেন? আপনারা কি জিততে পারবেন?
‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৭জন ছিল, সেই ১৭জনও কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকেনি। আমাদের নেতারা যারা ঢাকায় ছিলেন, তাদের সকলের প্রয়াসে সকলের চেষ্টায় আমরা কিন্তু বিদ্রোহীকে প্রশমিত করতে পেরেছি। এটিই আমাদের ভিক্টরির প্রথম সোপান। আমাদের দলের ইউনিটিই হচ্ছে মূল, আমরা নেত্রীর নেতৃত্বে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী ঐক্য প্রদর্শন করতে পেরেছে। এজন্য আমরা এই মহাবিজয় অর্জন করেছি।’, বলেন এই নেতা।
আমাদের নেতার (শেখ হাসিনা) নির্দেশে, আমরা এই বিজয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করতে চাই। সেজন্য আমাদের সভাপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করেছি, আগামী ১৯ জানুয়ারি বেলা আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবো, বিজয় উৎসব উদযাপন করবো।
সূচনা বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুল-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডাঃ দীপু মনি, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেনসহ মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এসএমএন