খুলনা শিশু হাসপাতাল: বেড ও কেবিন সংকটে রোগী ভর্তি বন্ধ
৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দক্ষিণাঞ্চলে এবারের শীত মৌসুমে নিউমোনিয়া, সেপটিসেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা চিকিৎসা নিতে শহরের হাসপাতালে আসছে। গেল বছরের ১২ মাসে ১৭ হাজার শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৬৮০ জনের। এবারের শৈত্যপ্রবাহের মধ্যদিয়ে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ’ শিশু খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে, রোগীর চাপে বেড ও কেবিন খালি না থাকায় ভর্তি বন্ধ করে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটকে বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দিয়েছে।
সূত্র মতে, গত মাসে একদফা এবং জানুয়ারির শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের সূত্র জানান, গত বছরের শেষ চার মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৩৭০ শিশু নিউমোনিয়া ছাড়াও ডায়রিয়া, জন্ডিস, কফ এন্ড কোল্ড, ফেনিনজাইটিস, নিউমোনাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এ মাসেই মারা যায় ২৭ শিশু। অক্টোবরে ১ হাজার ৩৭৯জন আক্রান্ত হয়, মৃত্যু ৪৭, নভেম্বরে ১ হাজার ৪২৭জন আক্রান্ত হয়, মৃত্যু ৬০জন, ডিসেম্বরে আক্রান্ত ১ হাজার ৪৩৭জন আক্রান্ত হয়, মৃত্যু ৬১জনের। খুলনা শিশু হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৬২৬ শিশুর মৃত্যু হয়।
এদিকে, রোগীর চাপে হিমশিম খেয়ে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই মুহূর্তে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা যাবে না- মর্মে বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আন্তঃবিভাগে কোন বেড ও কেবিন খালি না থাকায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ভর্তির জন্য প্রতিদিন সকালে ভর্তি কেন্দ্রে সিরিয়াল দিয়ে রাখুন, বেড খালি হওয়া সাপেক্ষে সিরিয়াল অনুযায়ী ভর্তি করা হবে’।
হাসপাতালের সূত্র জানান, শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ৩৮টি কেবিন এবং অন্যান্য জরুরী চিকিৎসা বিভাগ ও ওয়ার্ড নিয়ে মোট ২৭০টি বেড রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দু’ শতাধিক শিশু রোগী এখানে চিকিৎসাধীন থাকে। গেল নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর চাপ বেশি ছিল। তবে, বর্তমানে চাপ কিছুটা কম বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে শিশু খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা বেশি। কেবিন বা বেড খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার পূরণ হয়ে যায়। ফলে সামাল দিতে বেগ পেতে হয়। যে কারণে সিরিয়াল দিতে বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়েছে। সিরিয়াল অনুযায়ী ভর্তি করা হয়ে থাকে। তারপরও সকল রোগীকেই সব ধরণের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
জেনারেল হাসপাতালের সূত্র জানান, ‘নবজাতক থেকে পাঁচ বছর বয়সী নিউমোনিয়া, ব্রণ কিউলাইটিজ, ডায়রিয়া, আমাশয়, কম ওজন, বাথ, অ্যাসফেকসিয়া, অপরিণত বয়সের বাচ্চা, নিওনেটাল জন্ডিস, জন্মগত হার্টে ছিদ্র, থ্যালাসিমিয়া, অপুষ্টিজনিত ও কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে।’
জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ শরাফাত হোসাইন জানান, ‘মায়েদের অসচেতনতার কারনেও শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বালিকা বধূদের গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানও ওজনে কম হচ্ছে ।’
তার দেওয়া তথ্য মতে, জেনারেল হাসপাতালে ওষুধের সংকটের পাশাপাশি মূমূর্ষ রোগীদের জন্য ইনকিউভিটর আইসিইউ ও সিসিইউ মেশিন নেই। এ হাসপাতালে শিশুদের জন্য ছয়টি বেড থাকলেও বুধবার এখানে ১৭টি শিশু চিকিৎসাধীন আছে।
জেনারেল হাসপাতালের সিভিল সার্জন এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এক কর্মশালায় উল্লেখ করেন, ‘জেলায় প্রতি হাজারে গত বছর গড়ে ১৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ তে নামিয়ে আনতে হবে। মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে হবে। নিয়মিত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।’
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ সুশান্ত কুমার রায় এ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে স্বাস্থ্য বিভাগের অরগানগুলো কাজে লাগাতে হবে। আন্তরিক ভাবে স্বাস্থ্য সেবা দান করায় নারী পুরুষের গড় আয়ু বেড়েছে।’
সারাবাংলা/আরএসও