Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশরাফের জন্য দূর্বাঘাস, ফুলের আর্তনাদ: শ্রদ্ধাঞ্জলিতে আ. লীগ


৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৫২

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: দলের ত্যাগী-নিবেদিত নেতা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এই শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেন।

এর আগে রোববার (৬ জানুয়ারি) সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে সংসদ ভবন চত্বরে নেওয়া হয়। এদিন সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স জানাজার জন্য সংসদ চত্বরে আনা হয়।

মরদেহ আনার কিছুক্ষণ পর সেখানে দলের পক্ষ থেকে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলিতে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ গভীর শোকে মুহ্যমান। মহান জাতীয় সংসদ ভবনের সবুজ প্রান্তরের দুর্বাঘাস আর উদ্যানের ফুল-রেণুতে কান্নার রেখা। জানাযায় উপস্থিত সকলের শোকাতুর দীর্ঘশ্বাসে নিশব্দ কান্নার সকরুণ আর্তনাদ। শোকে বিহ্বল সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের আদর্শিক- সহোদর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো একজন রাজনৈতিক কর্মীকে চিরকালের বিদায় জানাবার কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। আমাদের চারপাশে কেবল শোকসন্তপ্ত বাক-রুদ্ধতা- কেবলই শূন্যতা।’

‘আশরাফ শব্দের অর্থ ভদ্রলোক, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, দক্ষতা, বিচক্ষণ-দৃঢ়চেতা দূরদর্শী নেতৃত্বের কীর্তিগাঁথা গৌরবময় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি ছিলেন একজন নম্র-ভদ্র নিরহঙ্কারী-নির্লোভ নির্ভিক ও সত্যভাষী মানুষ। তার ছিল বাংলার মাটি ও মানুষের প্রতি প্রবল ভালোবাসা।’

বিজ্ঞাপন

একাত্তরের রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার অগ্রদূত। আত্মপ্রচার, স্বজনপ্রীতি, কোটারি, দুর্নীতি, ভেদ-বৈষম্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। উদার নৈতিক-মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন। দল গোষ্ঠী ও মতাদর্শের উর্ধ্বে সকলের কাছেই ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মহৎপ্রাণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতি আজ তার শোকে গভীর শোকাহত। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নীতি-আদর্শ বিনয় ও মার্জিত চরিত্রের গুণাবলি আমাদের জন্য চির পাথেয় হয়ে থাকবে। সৈয়দ আশরাফ এক মৃত্যুহীন প্রাণ। কোটি প্রাণের আবেগ ও অনুভূতির নাম আজ সৈয়দ আশরাফ।’

হানিফ আরও বলেন, ‘তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারিয়েছে একজন মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিককে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি। ওয়ান ইলেভেনের চরম বৈরী পরিবেশেও স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক আওয়ামী লীগের হাল ধরে বাঙালি জাতিকে পৌঁছে দিয়েছিলেন মুক্তির বন্দরে। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। সংকটকালে নীতি ও নেতৃত্বের প্রতি তার আনুগত্য ও সাহসী নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে।’

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন মুজিবাদর্শের একজন ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক ব্যক্তি। চেতনা মূল্যবোধ বিশ্বাস ও অনুভূতির গভীরতম স্পর্শে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পরম আপনজন। আজও ওই মহাসিন্ধুর ওপর থেকে ভেসে আসে- ঐতিহাসিক সেই অমোঘ বাণী : ‘আওয়ামী লীগ তো আওয়ামী লীগই, আমি এটা দল কোন দিনই ভাবি নাই, আওয়ামী লীগকে ভাবছি একটা অনুভূতি। একটা অনুভূতির নাম আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর রক্ত, হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর আত্মত্যাগে, আন্দোলন-সংগ্রামে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই অনুভূতির নামই হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের আমি সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায় তখন আমারও হৃদয়ে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী যদি ব্যথা পায়, সেই ব্যথা আমিও পাই।’

বিজ্ঞাপন

আজ আওয়ামী লীগ পরিবারের গর্বিত সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অন্তিম বিদায় জানাতে সমবেত হওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জন্য কতটা বেদনার, কতটা কষ্টের তা বোঝানো যাবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হৃদস্পন্দন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা- নিষ্ঠাবান সহকর্মী, প্রাণপ্রিয় ছোটভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আজ শোকে মুহ্যমান।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী ও বাংলার গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয়ের অনুভূতিতে চিরকাল বেঁচে থাকবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁর পবিত্র স্মৃতির প্রতি জ্ঞাপন করছি বিনম্র শ্রদ্ধা। শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।

আশরাফ ভাই আপনাকে অভিবাদন।

ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমা চাই, বক্তব্যে মঞ্জুরুল ইসলাম: জানাজা শুরুর আগে সেখানে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তার ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই দীর্ঘদিন আপনাদের সঙ্গে ছিলেন। আপনাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তার কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে আপনারা ক্ষমা করবেন। এছাড়া তার কোনো দেনা-পাওনা থাকলে আমাদের জানাবেন। পরিবারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রথম জানাজা সাড়ে ১০টায়: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপস্থিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজা শুরু হয়। জানাজা পরিচালনা করেন মাওলানা আবু রায়হান। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্য ও এমপিরা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

ফুলে ফুলে শ্রদ্ধা: প্রথম জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এরপর তার কফিনে ১০টা ৪০ মিনিটে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১০টা ৪১ মিনিটে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সভাপতি, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় প্রধান, বাণিজ্যমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসন ও সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে এ সময় সৈয়দ আশরাফকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন আশরাফ।

শনিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে তার মরদেহবাহী বাংলাদেশ বিমানের বিজি০৮৯ ফ্লাইটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর সৈয়দ আশরাফের মরদেহ বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ রাখা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমাগারে। সেখান থেকে মরদেহ সংসদ চত্বরে নেওয়া হয়।

ঢাকা থেকে দুপুরে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ নেওয়া হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে। সেখানে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়াম মাঠে অনিুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। মরহুমের তৃতীয় জানাজা দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আছর তাকে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।

সৈয়দ আশরাফ অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/এইচএ/একে

আওয়ামী লীগ সংসদ চত্বর সৈয়দ আশরাফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর