২৯৮ সাংসদের মধ্যে ২৪৪ জনই কোটিপতি
৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:১৬
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে নির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২৪৪ জনেরেই মোট সম্পদের পরিমাণ কোটি টাকার ওপরে। অর্থাৎ ২৪৪ জন সংসদ সদস্যই কোটিপতি।
রোববার (৬ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ীদের তথ্য উপস্থাপন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট ৮১ দশমিক ৮৭ শতাংশ সংসদ সদস্যদের সম্পদ কোটি টাকার ওপরে।
লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার জানান, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘণ করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা বা ক্ষেত্রমত থানা ও জেলা কমিটির দলীয় সদস্যগণ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর প্যানেল তৈরি করবেন এবং কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড উক্ত প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন। কিন্তু এ বিধানটি কোনো দলকেই অনুসরণ করতে দেখা যায়নি।
সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে ৮০ দশমিক ৮৭ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মহাজোটের নির্বাচিতদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৯৪ (২৩৬ জন) এবং ঐক্যফ্রন্টের ৫৭ দশমিক ১৪ (৪জন) এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিতদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশের বা একজনের এই শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে।
নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রবেশ বাড়ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচিতদের ৬১ দশমিক ৭ (১৮২ জন) শতাংশের পেশা ব্যবসা। মহাজোট থেকে নির্বাচিতদের ৬০ দশমিক ৪১ এবং ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যবসা। আইন পেশায় রয়েছেন ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সংসদে ব্যবসায়ীদের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রার্থীদের মামলার চিত্র তুলে ধরে সুজন জানিয়েছে, নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে বর্তামনে মামলা আছে। অতীতে ছিল ১২২ জনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে আছে এবং আগেও মামলা ছিল এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৬। ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে এমন প্রার্থী ৪ জন। অতীতে ছিলো ৩৩ জনের বিরুদ্ধে। নির্বাচিতদের মধ্যে ঋণগ্রহিতার সংখ্যা ৪০ জন।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের পুরো পরিবেশ যদি আমরা বিবেচনায় নিই তাহলে- সেই সময়ের পরিস্থিতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন তথা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অনুকূল মনে করার কোনো অবকাশ নেই। প্রচার প্রচারণার পুরো সময় জুড়েই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান, হামলা, গ্রেফতারি-হয়রানি ইত্যাদি কারণে অনেক প্রার্থীর নির্বিঘ্নে প্রচার কাজ চলাতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। বাধার কারণে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারণা চারাতে না পারা, বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকাসহ অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে ১৭জন নিহত, বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট ও তার নেতাকর্মী এবং পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিত দেখা গেছে। আবার বাধা না থাকা সত্বেও অনেক প্রার্থীকে প্রচারণে নামতে দেখা না যাওয়ার অভিযোগ আছে। নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারণী চিত্র দেখে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।’
নির্বাচনে অনিয়মেরও অনেক অভিযোগ সুজনের চোখে পড়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘কোনো কোনো কেন্দ্রে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইন করে দাড়িয়ে থাকলেও ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ না করা, কোনো কোনো কেন্দ্রে অস্বাভাবিক বেশি বা কম ভোট পড়া, ইভিএম ও অন্য আসনগুলোর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষনীয় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এবারের নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয় হয়েছে এবং মহাবিপর্যয় হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। এর কারণ অনুসন্ধান করলে দুটি বিষয় বেরিয়ে আসবে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নির্বাচনি অনিয়ম। অনিয়মের অভিযোগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা কোনো নিবাচন পর্যবেক্ষণ করি না। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর কাজ করি। নির্বাচন নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে- কমিশনের দায়িত্ব হবে সেগুলো তদন্ত করা। অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করারও ক্ষমতা আছে কমিশনের।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসএইচ/এসএমএন