বস্ত্র-পাটশিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সবই করব: গোলাম দস্তগীর গাজী
৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৩১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বস্ত্র ও পাট শিল্প আমাদের ঐতিহ্য বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাটশিল্প মন্ত্রণালয়ে সদ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাওয়া গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। তিনি বলেন, ‘বস্ত্র ও পাটশিল্পের উন্নয়নে যা যা করার দরকার, আমি তার সবই করব।’
রোববার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এর পর সন্ধ্যায় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে নিজ বাসভবনে অনূভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন গোলাম দস্তগীর গাজী।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আশা করি, বস্ত্র ও পাটশিল্প অনেক এগিয়ে যাবে। আমি দেশের সম্পদ নিয়ে কাজ করব, দেশের ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরব। আমি আমার সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করব।’
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নিবার্চন, ৭১-এর মুক্তিযোদ্ধ, এরপর ৭৫-এর কালরাত্রি; এর সব ঘটনায় আমি জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছি। এরপর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে সব সময় কাজ করেছি।’
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘অনেক ত্যাগের পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো। এরপর ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় এলো আওয়ামী লীগ। তখন থেকে উন্নয়নের যাত্রা শুরু। ’
উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু হয়েছে উল্লেখ করেছে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হয়েছি। এখন আমরা উন্নত দেশের যাত্রা শুরু করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুনভাবে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছেন৷ আমি আশা করি, এই পরিষদের মাধ্যমে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।’ বাংলাদেশ শিগগিরই উন্নত বিশ্বের খাতায় নাম লেখাবে বলেও তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
গোলাম দস্তগীর গাজীর জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার তারাব ইউনিয়নের খাদুন গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার বাবা গোলাম কিবরিয়া গাজী, মা শামসুন্নেছা বেগম।
মেধাবী গোলাম দস্তগীর গাজী মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন নটরডেম কলেজ থেকে। পরে ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৬৬-দে ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন দস্তগীর গাজী। বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুনের একজন যোদ্ধা হিসেবে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে বিভিন্ন সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে থাকলেও গাজী দস্তগীর নিজ বুদ্ধিমত্তা, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি ও কর্মদক্ষতা কাজে লাগান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে। ১৯৭৪ সালে দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও দেশের শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্লাস্টিক ও রাবারজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
গোলাম দস্তগীর গাজী ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কাকরাইল, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, মৌচাক, ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকা থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের বহু চড়াই-উৎরাই পার করা গোলাম দস্তগীর গাজী ৯০-এর দশক থেকে পৈতৃক ভূমি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকাবাসীর জন্য কাজ করতে শুরু করেন।
২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিভিন্ন মহলের চাপ উপেক্ষা করেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অটল ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। পরে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় তার নেতৃত্বে। সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ পরিচয়ের বাইরে সমাজসেবক এবং বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক ও ক্রীড়া অনুরাগীও।
২০০৮ সালের পর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ এবং সদ্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে জনরায় নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসেন। এ নিয়ে টানা তিন মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য হলেন গাজী দস্তগীর। এবারে পেলেন মন্ত্রিত্বও।
সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখার জন্যে ২০১৮ সালে গোলাম দস্তগীর গাজী মাদার তেরেসা পদকে ভূষিত হন।
সারাবাংলা/এসজে/এমএনএইচ