এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস, কাজে ফেরার আহ্বান
৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পোশাক শ্রমিকদের সব দাবি আগামী এক মাসের মধ্যে পূরণ করার আশ্বাস দিয়ে কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘বেতন কাঠামোতে কোনো বৈষম্য থাকলে তা দূর করা হবে। এখন কেউ বেতন কম পেলে পরের মাসের বেতনের সঙ্গে বকেয়া হিসেবে তা পরিশোধ করা হবে।’ মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এর আগে বিকেল ৪টায় শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক শুরু হয়।
টানা চারদিন অসন্তোষের পরে পোশাক শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে সরকার। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খানম সাংবাদিকদের বলেন, দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যা নিরসনে আজকের এই বৈঠক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে একটি কমিটি করা হবে। সেখানে মালিকপক্ষের ৫ জন, শ্রমিক প্রতিনিধি ৫ জন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১ জন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের ১ জন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী এক মাসের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করা হবে।
বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন বেতন কাঠামোতে থাকা অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন কাঠামোতে প্রথম গ্রেডে বেসিক কমেছে ৪০৫ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে বেসিক বেতন কমেছে ৪১২ টাকা। তৃতীয় গ্রেডে বেসিক কমেছে ৪০ টাকা। চতুর্থ গ্রেডে বেসিক বেড়েছে ৮২ টাকা। পঞ্চম গ্রেডে বেসিক বেড়েছে ১৬৮ টাকা এবং সপ্তম গ্রেডে বেসিক বেড়েছে ২৫৬ টাকা।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে বেতন গ্রেড নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ঘটনাটিকে কেউ ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটি করতে দেবো না আমরা। আমরা তাদের সব দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। যা উঠে এসেছে তা হলো, বেতন গ্রেড তাদের মূল সমস্যা। আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আগামী মাসেই (ফেব্রুয়ারি) তাদের যে গ্রেড সেই অনুযায়ী বেতন দেওয়া হবে। তবে কম দেওয়া হবে না। নতুন বেতন কাঠামো জানুয়ারি থেকে কার্যকর ধরে বকেয়াসহ সব পাওনা আগামী মাসেই পরিশোধ করা হবে।
উসকানি কানে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা সামান্য বিষয়টি নিয়ে সড়ক অবরোধ করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তারা শান্তিপ্রিয় শ্রমিক হতে পারে না। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে তাদের প্রতিহত করা হবে। আজকেও এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে এগুলো কঠোরভাবে প্রতিহত করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বেতন কাঠামোতে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তা দূর করা হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে সমাধান করা হবে। সমন্বয় আপনাদের (মালিক পক্ষ) করতে হবে। কোনো ত্রুটি হলে প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না। শ্রমিকদের বেতন সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার করে দিলেন- এটা হবে না। এক মাসের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হতে হবে। গ্রেডিং কাঠামোতে বেসিক বা গ্রস স্যালারি কমবে না। যদি কেউ কমানোর চেষ্টা করেন, আমরা আপনাদের (শ্রমিক) সাথে থাকব। কিন্তু কেউ ভাঙচুর করলে বরদাস্ত করব না।
জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, গেজেটে কোনো সমস্যা থাকলে, কোনো ধরনের অসঙ্গতি থাকলে- তা দূর করা হবে। এই মাসে যদি কেউ কম বেতন পেয়ে থাকেন, তাহলে আগামী মাসের বেতনের সঙ্গে বকেয়া হিসেবে তা পরিশোধ করা হবে।
টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, একজন শ্রমিকও কম বেতন পাবেন না। বেসিক হোক বা গ্রস কোনোটাই কম দেওয়া হবে না। আপনারা (শ্রমিক) বিভ্রান্ত হবেন না। যেখানে যেখানে কম হয়েছে তা সমন্বয় করে দেওয়া হবে।
সরকার গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে। নভেম্বরের শেষ দিকে বর্ধিত বেতনের গেজেট প্রকাশ হয়। ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ধরে ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, বছরের শুরু থেকে বর্ধিত কাঠামোতে বেতন পাবেন শ্রমিকেরা। এর আগে, ২০১৩ সালের মজুরি কাঠামোতে ন্যূতম বেতন ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। শ্রম আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হয়। সে লক্ষ্যে নতুন মজুরি কাঠামো করতে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মজুরি বোর্ড গঠন করেছিল সরকার।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ‘র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামাম মিয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু।
মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক বিকালে
শ্রমিক আন্দোলনে তৃতীয়পক্ষের ইন্ধন রয়েছে: বিজিএমইএ
সারাবাংলা/এসএইচ/ইএইচটি/এটি/এমএনএইচ