যেখানে শেষ করেছি, সেখান থেকে এগিয়ে নেবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
৮ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:০১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জনগণের দোরগোড়ায় স্বল্প খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছি। এর আগে যেখান থেকে কাজ শেষ করেছি, সেখান থেকে শুরু করে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে এবারের লক্ষ্য।’ মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে কিডনি ও ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করার ঘোষণা দিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে অসংক্রামক রোগ বিশেষ করে কিডনি ও ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। দেশের সর্বত্র এই সব রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়াররপর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।’ এসময় জেলা পর্যারের হাসপাতালগুলোতে ১০ শয্যা করে কিডনি রোগীদের জন্য বেড রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে পূর্ণাঙ্গ জরুরি বিভাগ স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি সরকারি বিবেচনায় রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পূর্ণাঙ্গ জরুরি বিভাগ স্থাপিত হলে অনেক মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা বাড়বে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতিগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।’
গত দশ বছরে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘গত দশ বছরে দেশে রোগী শয্যার সংখ্যা ২৭ হাজার থেকে বেড়ে ৪২ হাজার হয়েছে। একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় হয়েছে চারটি। নতুন ২২টি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। চারটি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮টি। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। প্রায় ৯১ দশমিক তিন শতাংশ শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পোলিও ও ধনুস্টংকারমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১’। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন।’’ স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশে অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যেন চিকিৎসকরা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন, প্রতিটি হাসপাতালের যেন যন্ত্রপাতি সচল থাকে, ওষুধ যেন পর্যাপ্ত থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘১০ হাজার চিকিৎসকের নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। তারা যেন জেলা-উপজেলা পর্যযায়ে উপস্থিত থাকেন। একইসঙ্গে গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেছেন, সেগুলো পুরোদমে চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় তার সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ