জাবিতে অতিথি পাখি দেখতে এসে হতাশ দর্শনার্থীরা!
৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৯
।। তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উড়ে আসে নানা প্রজাতির শত শত অতিথি পাখি। দেশ-বিদেশের এসব পাখি দেখতে তাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। সাধারণত ছোট-বড় লেকে লাল শাপলার ফাঁকে অতিথি পাখির নয়ন জুড়ানো খুনসুটি দেখতেই ক্যাম্পাসে আসেন দর্শনার্থীরা।
তবে এবার অতিথি পাখি দেখতে এসে কিছুটা হতাশ হতে হচ্ছে তাদের। কারণ কমে গেছে অতিথি পাখির সংখ্যা। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ক্যাম্পাসে এসে কাছ থেকে কাঙ্খিত অতিথি পাখি দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছেন তারা।
অন্যবার পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেকে অতিথি পাখি থাকলেও এবার লেকটিতে অতিথি পাখির দেখা মিলছে না। তাছাড়া এবছর পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকে ও সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকেও অতিথি পাখি তুলনামূলক কম। তার উপর দর্শনার্থীদের কোলাহলের কারণে পাখিগুলো লেকের উল্টো পাশে আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে তাদের দেখাও পাচ্ছেন না দর্শনার্থীরা। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন তারা।
রাজধানী ঢাকা থেকে অতিথি পাখি দেখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন সীমা নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতি বছরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের অতিথি পাখি দেখতে আসি। অন্যান্যবার অতিথি পাখি দেখে ভালো লেগেছে তাই এবারও এসেছি। তবে এবার লেকে অতিথি পাখির সংখ্যা কম। এত কম পাখি দেখে কী আর মন ভরে? তবে আশা করছি, শীত বাড়ার সঙ্গে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে।’
সাঈদ নামের এক দর্শনার্থী বললেন, এখন অতিথি পাখি কম। আগে অনেক বেশি ছিল। এজন্য অতিথি পাখি দেখে তৃপ্তি পাচ্ছি না। তাছাড়া অতিথি পাখি লেকের অপর পাশে চলে গেছে। দূর থেকে ভালো দেখাও যাচ্ছে না। আর মনে হচ্ছে সবই একই প্রজাতির পাখি। তবে শীত বাড়লে অতিথি পাখি বাড়বে বলে আশা করছেন তিনিও।
শুক্রবার সকালে অতিথি পাখি দেখতে আসা কয়েক দর্শনার্থী পরিবহন চত্বরের লেকের পাড়ে অতিথি পাখি নিয়ে কথা বলছিলেন। এসময় একজন বলে ওঠেন, ‘এই পাখি দেখতে টাকা খরচ করে জাহাঙ্গীরনগর আসলাম কেন!’ অতিথি পাখির প্রজাতি ও সংখ্যা কম হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন অন্যরাও।
এসব কথা শুনে আল-আমিন নামের ক্যাম্পাসের এক রিকশা চালক এই প্রতিবেদককে বলেন, দিন দিন ক্যাম্পাসে যেভাবে মানুষ বাড়ছে তাতে অতিথি পাখি যে আছে এটাই বেশি। এখন যে অতিথি পাখি আছে কয়েক বছর পর তাও দেখা যাবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেকেই পাখি দেখে ঢিল ছোঁড়ে। এতে অতিথি পাখি ভয় পেয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছে। আর যেগুলো এখনো আছে তারা মানুষ দেখে লেকের অন্য পাড়ে সরে যাচ্ছে।
১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মত অতিথি দেখা যায়। এরপর থেকে বর্তমান মৌসুম অবধি সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত ক্যাম্পাসের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেক, পরিবহন চত্বরের পেছনের লেক, পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও সুইমিংপুলে সংলগ্ন লেকে অতিথি পাখি বিচরণ করে। এর মধ্যে দর্শনার্থীরা খুব কাছ থেকে পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকের ও পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেকের অতিথি দেখার সুযোগ পান। প্রতি বছর শীতের শুরুতে এসে পুরো শীতের মৌসুম এসব লেকে কাটিয়ে শীত শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে এসব অতিথি পাখিরা। তবে বছর দুয়েক হলো ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে। শীতের শুরুতে অতিথি পাখি আসলেও ভরা মৌসুমে খোঁজ মিলছে না তাদের। তাছাড়া দুই মৌসুম ধরে ক্যাম্পাসে আসা অতিথি পাখির প্রজাতির সাথে আশংকাজনকভাবে পাখির সংখ্যাও কমেছে। আর অতিথি পাখির সংখ্যা কমায় হতাশ দর্শনার্থীরাও।
এদিকে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি কমে যাওয়ার পেছনে দর্শনার্থীদের উৎপাত বৃদ্ধি, যানবাহনের উচ্চ শব্দ, সময় মতো পাখি সংরক্ষণে উদ্যোগ না নেওয়া, পাখিদের ঢিল ছোঁড়া ইত্যাদিকে দায়ী করছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া কাঁটা তারের বেড়া সংলগ্ন ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা ও দর্শনার্থী বেড়ে যাওয়ায় পাখিদের থাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অভিযোগ তাদের। এমনটি চলতে থাকলে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জানালেন, প্রতি বছর সাধারণত হাজার পাঁচেক অতিথি পাখি আসলেও এবছর প্রায় তিন হাজার পাখি এসেছে। তিনি বলেন, অতিথি পাখি এখনো পুরোপুরি আসেনি। তবে জানুয়ারিতে পাখি চলে আসবে।
এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, পরিবহন চত্বরের পেছনের লেক ও পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেকে অন্যান্য বার অনেক অতিথি বসতো। তবে এবার দর্শনার্থীদের উৎপাত এত বেশি যে, জিমনেশিয়াম ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেকে চলে যাচ্ছে। অনেকে ঢিল ছোঁড়ে, উল্লাস করে। এগুলো অতিথি পাখি থাকার পেছনে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। নিষেধ করার পরেও কাজ হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সারাবাংলা/এসএমএন