Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অরিত্রীর আত্মহত্যা: মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই


৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:০৯

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ মামলার তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হবে, তারও কোনো সুনির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। পুলিশ বলছে, আত্মহত্যার প্রাথমিক সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তারা পেয়েছে। তবে নির্বাচনের কারণে অনেক কর্মকর্তাই এখন ছুটিতে রয়েছেন। থানা থেকেও প্রতিবেদন আসেনি। এসব কারণে এই মামলাটিতে এখনও চার্জশিট দেওয়া যায়নি। তবে তদন্ত চলছে।

মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মতিঝিল জোন) আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে মাসব্যাপী পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। যার ফলে অরিত্রীর বাবার দায়ের করা মামলাটিতে যে পরিমাণ তদন্ত দরকার ছিল, সেটি হয়নি। নির্বাচনি দায়িত্ব শেষে অনেকেই ছুটিতে আছেন।

তিনি বলেন, মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকলেও তদন্তকাজ নতুন করে শুরু হবে। এছাড়া ওই মামলার সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়গুলো আগেই শেষ করা হয়েছে। এর পর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি এই মামলায়।

অরিত্রী আত্মহত্যা মামলার তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হতে পারে এবং কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে— জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, তদন্ত পুনরায় শুরু হয়েছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করা হচ্ছে। থানা থেকে অরিত্রীর আত্মহত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। ৯ জানুয়ারি থানা থেকে প্রতিবেদন আসার কথা রয়েছে। সবমিলিয়ে যদি দেখা যায় এর বাইরে আর কিছু নেই, তখন আদালতে চার্জশিট দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অরিত্রীর আত্মহত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক বলেন, আত্মহত্যার প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে পাওয়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরি হলে সেটি শিগগিরই ডিবিতে পাঠানো হবে।

এদিকে, অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও পরিবারের সদস্যরা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। বাঁচতে হবে বলে বাধ্য হয়ে কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়। মামলায় তিন জন আসামি। এক ও দুই নম্বর বাদে পুলিশ তিন নম্বর আসামিকে ধরে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি আবার আদালত থেকে জামিনও পেয়েছেন।’ ওই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

দিলীপ অধিকারী আরও বলেন, ‘মামলার সবশেষ অবস্থা কী, তা জানি না। শুনছি সিসিটিভির ফুটেজে নাকি পুলিশ তেমন কিছুই পায়নি। আদৌ আমার মেয়ে কোনো বিচার পাবে কি না, সেটাও জানি না। তবে আমার সন্তান গেছে, যাক। মেয়েকে তো ফিরে পাব না! অন্য কারও সন্তান যেন এভাবে আত্মহত্যা না করে, সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে সঠিক পথে আনা হোক।’

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বেইলি রোডের শাখায় গেটের সামনে মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে কথা হয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী পরমা চ্যাটার্জীর সঙ্গে। পরমা বলেন, ‘আসামিরা গ্রেফতার হয়নি কেন? মামলার এখন কী অবস্থা? আদৌ কিছু হবে কি? আমরা তো কিছুই জানি না। এসব বিষয় নিয়ে ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।’

তিনি জানান, একই ঘটনায় স্কুলের গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষর পদ নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। সেটা নিয়েও সব শিক্ষার্থীর মধ্যে কানাঘুষা হচ্ছে। যা কিছুই ঘটুক, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন ভালোভাবে চলমান থাকে, সেটাই সবার প্রত্যাশা।

উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর মোবাইল ফোনে নকল করার অপরাধে অরিত্রী ও তার মা-বাবাকে ডেকে আনেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। অরিত্রীর পরিবারের অভিযোগ, মেয়ের সামনেই মা-বাবাকে অপমান করেন এবং স্কুল থেকে অরিত্রীকে বের করে দেওয়ার কথা বলেন অধ্যক্ষ। মা-বাবার অপমান সহ্য করতে না পেরে অরিত্রী শান্তিনগরের বাসায় ফিরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। অরিত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা পরদিন ক্লাস বর্জন করে সহপাঠী হারানোর বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। ঘোষণা করা হয় ছয় দফা দাবি। তাদের দাবিগুলো হলো— অধ্যক্ষসহ জড়িত অন্য শিক্ষকদের পদত্যাগের লিখিত আদেশ জনসম্মুখে দেখাতে হবে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ভিকারুননিসা স্কুলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে; কথায় কথায় বহিষ্কারের ভয় দেখানো যাবে না এবং অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির জন্য ডিটেনশন পলিসি চালু করতে হবে; মানসিক সুস্থতার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানসিক চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে; গভর্নিং বডির সবাইকে অপসারণ করতে হবে; এবং ঘটনার জন্য অরিত্রীর মা-বাবার কাছে জড়িতদের জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে।

এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষার্থী আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে দোষী সাব্যস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তিন জনকে বরখাস্ত করার জন্য ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভাগীয় মামলাসহ সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে ওই তিন শিক্ষকের এমপিওভুক্তিও বাতিল করা হয়।

এ ঘটনায় অরিত্রীর বাবা ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ৫ ডিসেম্বর বিকেলে পল্টন থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই মামলায় আত্মগোপনে থাকা শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে উত্তরার একটি হোটেল থেকে ৫ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

অরিত্রির আত্মহত্যা অরিত্রী অধিকারী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর