মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় জাপায় চাপা ক্ষোভ
৯ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:৩৪
।। আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারে এবার জাতীয় পার্টির (জাপা) কেউই মন্ত্রিপরিষদে নেই। মূলত দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্তে এবার দলটি সরকারের না থেকে কেবল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে। দলপ্রধানের এমন সিদ্ধান্তে নারাজ জাতীয় পার্টির একাংশ। এর ফলে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে দলটিতে।
টানা তিনবারের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে রয়েছে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাপা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে গত দুই মেয়াদে মন্ত্রিত্ব পান জাপার নেতারা। মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি সংসদে বিরোধী দলেও ভূমিকা পালন করে দলটি।
নবম জাতীয় সংসদে জিএম কাদের ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী, পরে তাকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী করা হয়। এরপর দশম জাতীয় সংসদে এক মন্ত্রী ও দুই উপমন্ত্রী পায় জাপা। আনিসুল ইসলামকে পানিসম্পদমন্ত্রী, মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
এর ফলে জাপা বিরোধী দলে ছিল, মন্ত্রিপরিষদেও ছিল। সংসদ ও সরকারে জাপার যৌথ অংশগ্রহণ নিয়ে সমালোচনা ছিল। জাপার ভূমিকা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। এর ফলে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাপা কেবল বিরোধী দলে থাকবে। দলের চেয়ারম্যান চান জাপা তার রাজনৈতিক স্বচ্ছতায় ফিরে আসুক। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি দল হয়ে উঠুক।
এরশাদের এমন সিদ্ধান্ত জাপার নেতারা মেনে নিলেও দলের অভ্যন্তরে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আগেই ঘটেছিল ৩ জানুয়ারি জাপার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে। জাপা এবারের সংসদে সরকারে থাকবে, না বিরোধী দলে থাকবে, তা নিয়ে হট্টগোল বাধে ওই বৈঠকে। সরকারের মন্ত্রিপরিষদে থাকা জাপার তিন নেতা মন্ত্রিত্বে থাকার পক্ষে মত দেন। অন্যদিকে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফিরোজ রশীদ শুধু বিরোধী দলে থাকার পক্ষে মত দেন। বিষয়টি নিয়ে তিন নেতার তোপের মুখেও পড়েন রওশন এরশাদ। পরে কোনোপ্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওইদিনের বৈঠক শেষ হয়।
এর দুইদিনের মাথায় এই বিভেদ মেটাতে এগিয়ে আসেন এইচ এম এরশাদ। তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারকে এক চিঠিতে জানান, জাপা একাদশ জাতীয় সংসদে শুধু বিরোধী দলে থাকবে।
এছাড়া শারীরিক অসুস্থতা থাকায় এরশাদ প্রথম দিনে শপথ নিতে পারেননি। পরে ৬ জানুয়ারি তিনি শপথ নেন। এরইমধ্যে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ শপথ নেওয়ার দিন থেকেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আসার পরই তিনি দেশে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এরশাদ হাসপাতালে এখন দল সামালের দায়িত্ব পড়েছে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের হাতে। একদিকে সরকারি দলে না থাকা নেতাদের ক্ষোভ, অন্যদিকে এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের ‘সংকট’ মোকাবিলা করাটা হবে জাপার চ্যালেঞ্জ।
এদিকে এরশাদের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার কারণে তিনি যদি সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তবে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হবেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। আর বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে জি এম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন। ভবিষ্যতে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি যে পরিস্থিতিতে পড়ুক না কেন, তা সামাল দিতে হবে জাপার শীর্ষ এই দুই নেতাকেই।
‘এরশাদ অসুস্থ, দলের ভেতরে চাপা ক্ষোভ’—এমন পরিস্থিতির বিষয়ে দলটির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে গোছানোর কাজ শুরু করতে হবে। একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে দলটিকে চাঙ্গা করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থেকে সত্যিকার দায়িত্ব পালন করবে ‘ গতবারের চেয়ে জাতীয় পার্টি এবার আরও বেশি গতিশীল ভূমিকায় থাকবে বলেও তিনি দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে