Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৈষম্যহীন কুঁড়ি : প্রাথমিক শিক্ষায় অটিজম সচেতনতা


১০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:৫৭

সকল শিশুকে মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় আনয়ন করা আমাদের একটি অঙ্গীকার। এই সকল শিশুর মধ্যে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা অন্যতম। যাদেরকে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণের অধিকার রক্ষায় `প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করেছে। এই আইনে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার বিষয়টি আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে। ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্য করা হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মোদ্দাকথা, সকল প্রতিবন্ধী শিশু অর্থাৎ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মাঝে অন্যতম হলো অটিস্টিক শিশু। বর্তমানে অটিজম নিয়ে আমাদের দেশে নানা প্রকার উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। যে সকল প্রতিবন্ধিতা স্নায়ুর সাথে সম্পর্কিত তাদেরকে আরো সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ও দেখভাল করার জন্য বর্তমান সরকার ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন- ২০১৩’ প্রণয়ন করেছে। এই আইনে ৪ (চার) ধরণের নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধিতার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো ১। অটিজম ২। ডাউন সিনড্রোম ৩। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা ৪। সেরিব্রাল পালসি।

প্রাথমিক শিক্ষায় অটিজম নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। একসময় অটিজম সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার চালু ছিল। মাতা-পিতা তাদের অটিজমে আক্রান্ত সন্তানদের সমাজের সম্মুখে আনতে চাইতেন না। ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখতেন। বর্তমান সরকারের অটিজম নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে তারা আজ সমাজের মূল ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সকলেই তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতপক্ষে অটিজম হলো মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের ৩ বছরের মধ্যে তার প্রতিবন্ধিতা প্রকাশ পায়। এই ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাধারণত শারীরিক গঠনে কোনো সমস্যা বা ত্রুটি থাকেনা। তাদের চেহারা ও অবয়ব অন্যান্য সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের মতই হয়ে থাকে। কিন্তু অটিজমের লক্ষণসমূহ একেক শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। সাধারণত এরা ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারে না, চোখে চোখ রাখতে পারেনা, নিজের ভিতর গুটিয়ে থাকা ও একই আচরণ বার বার করতে থাকা ইত্যাদি লক্ষণসমূহ অন্যতম। তবে অনেক ক্ষেত্রে এদের মধ্যে ছবি আঁকা, গান করা, কম্পিউটার গণনা বা গাণিতিক সমাধানসহ অনেক জটিল বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা পরিলক্ষিত হয়।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুর এই প্রতিভা ও দক্ষতাগুলো কাজে লাগানো অতীব প্রয়োজন। এভাবে তারা ধীরে ধীরে মূল ধারায় সম্পৃক্ত হতে পারবে। প্রথমেই তাদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিশুর মাঝে তাদের সম্পৃক্ত করণের ফলে ধীরে ধীরে তাদের প্রতিবন্ধিতা হ্রাস পেতে পারে। এমনও দেখা গেছে মৃদু প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক) শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মাঝে মেশার কারণে একেবারে সম্পুর্ণ সুস্থ শিশু হিসাবে পরিগণিত হয়।

এক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত উপকরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অটিস্টিক শিশুরা যেন বিদ্যালয়টিকে আপন মনে করে আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়মুখী থাকতে পছন্দ করে। এই বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং তা নিয়ে আমাদের সকলের কাজ করতে হবে।

একজন অটিস্টিক শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের কৌশল/কার্যক্রমগুলো কি কি হতে পারে, তা পর্যালোচনা করা উচিত। এসব বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষককে ধারণা বা প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন রয়েছে। সেই সাথে এমন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন যারা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের পাঠদানের বিষয়ে সম্যক ধারণালব্ধ। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে-যিনি অটিজম বিষয়ে ভাল ধারণা রাখেন। বিদ্যালয় থেকে এসব শিশুর যাত্রা বৈষম্যহীন হলে সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাদের প্রতি সমাজের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ধীরে ধীরে দূর হতে থাকবে। স্বাভাবিক মানুষের ন্যায় জীবন যাপন করতে পারবে তারা।

অটিস্টিক শিশুদের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে প্রথমেই জনসচেনতা সৃষ্টি করতে হবে। সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এদেরকে বোঝা না ভেবে সম্পদে পরিণত করার চিন্তাভাবনা করতে হবে। সর্বপোরি রাষ্ট্রকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।

অত্যন্ত আশার কথা যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা শেখ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এর ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আমরা এ মহৎ কর্মযজ্ঞের নিরন্তর সফলতা কামনা করি।

লেখক : সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, নরসিংদী

অটিজম প্রাথমিক শিক্ষা মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর