Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম শহরে বাড়ি বানাতে ছাড়পত্র লাগবে ওয়াসার


১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৫

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে আবাসিক-অনাবাসিক ভবন তৈরির আগে ওয়াসার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। নির্দিষ্ট ফি পরিশোধের মাধ্যমে ওয়াসার কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর ভবন তৈরি করা যাবে। অন্যথায় এসব ভবনে ওয়াসা পানির সংযোগ দেবে না।

পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা সঠিক হলেও এতে নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়বে এবং ঘুষ-দুর্নীতির আরেকটি ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫০ তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ওয়াসা আবাসিক-অনাবাসিক খাতে পানির দামও ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মার্চ থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার এই কার্যক্রম চালুর চিন্তাভাবনা করছে ওয়াসা। তার আগে ফি নির্ধারণ করা হবে। আগামী বোর্ড সভায় ফি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ওয়াসা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় ভবন নির্মাণ করতে হলে ওয়াসার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। চট্টগ্রাম নগরীতেও আমরা এটা চালু করছি। কারণ শুধু ভবন বানালেই তো হবে না, সেখানে পানি সরবরাহ করা যাবে কি-না, সংযোগ লাইন নেওয়ার বিধান আছে কি-না, এসবও তো দেখতে হবে। আমরা ঢাকা ওয়াসার বিধান যাচাই-বাছাই করছি। তেবে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে, ওয়াসার ছাড়পত্র না নিলে আমরা পানির সংযোগ দেব না।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য (বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব) মহসীন কাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিলের মধ্যে ৪০ তলা বিল্ডিং একটা বানিয়ে রাখলেই তো হবে না, সেই বিল্ডিংয়ে পানির লাইন কীভাবে নেওয়া যাবে কিংবা আদৌ নেওয়া যাবে কি-না সেটা তো ওয়াসাকেই ভাবতে হবে। সুতরাং যদি ছাড়পত্র নিতে হয়, সেক্ষেত্রে ওয়াসা আগে যাচাইবাছাই করে নিতে পারবে যে, আদৌ সেখানে পানির লাইন দেওয়া সম্ভব কি-না। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান এখনও আছে। নতুন করে আবাসিক-অনাবাসিক সব ভবনের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে সকল বোর্ড সদস্য একমত হয়েছেন।’

জানতে চাইলে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ এর মহাসচিব স্থপতি জেরিনা হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াসার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। কিন্তু অন্যান্য দেশে ভবন নির্মাণকারীর জন্য সমন্বিত কর্তৃপক্ষ আছে। আমাদের দেশে সেটা নেই। এখন একজন ভবন নির্মাণকারীকে যদি ছাড়পত্রের জন্য একবার সিডিএ, একবার ওয়াসা, একবার পরিবেশ অধিদপ্তরে যেতে হয়, তাহলে ভোগান্তির মাত্রাটা যে কি হবে, কল্পনাও করা যায় না। এছাড়া ভোগান্তির পাশাপাশি স্পিডমানির নামে ঘুষ লেনদেনেরও একটা সুযোগ থেকে যাচ্ছে।’

সমন্বিত কর্তৃপক্ষ ছাড়া প্রত্যেক সংস্থার কাছ থেকে আলাদা আলাদা ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান কেবল হয়রানিই বাড়াবে, এমনটাই মনে করছে এই নগর পরিকল্পনাবিদ।

এদিকে ফেব্রুয়ারি থেকে পানির বাড়তি দাম কার্যকর করার কথা জানিয়েছে ওয়াসা। আর্থিক ক্ষতি কমানো ও বিভিন্ন প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ শোধের জন্য পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়াসা কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, পানির বিল আবাসিক ও অনাবাসিক খাতে প্রতি ইউনিট ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে ছিল প্রতি ইউনিটপানির বিল ৯ টাকা ৪৫ পয়সা। এখন প্রতি ইউনিট পানির বিল পড়বে ৯ টাকা ৯২ পয়সা।

এদিকে পানির দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেছেন, ওয়াসার সরবরহ করা পানির ৮৮ শতাংশ গ্রাহক হচ্ছেন আবাসিক গ্রাহক। আর ওয়াসা দিনে চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ পানি সরবরাহ করতে পারে। এ জন্য নগরীর অধিকাংশএলাকায় পানির জন্য এখনও হাহাকার। আর চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে নতুন নতুন প্রকল্পের কথা বলে নগরবাসীকে বারবার বিভ্রান্ত করছে এবং দাম বাড়ানোর কথা বলে প্রকারান্তরে ওয়াসার অভ্যন্তরে পানি চুরি, অপচয় ও মিটার রিডারদের কারসাজিকে উসকে দিচ্ছে। নগরীর অধিকাংশ এলাকায় যেখানে পানির জন্য হাহাকার, সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর পানির সমস্যা সমাধান নাকরে নতুন করে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিবৃতি দিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সভাপতি আবদুল মান্নান।

সারাবাংলা/আরডি/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর