‘স্যালুট শাহনাজ আপা’
১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘‘উবারে কল দিলাম, ওপাশে রাইডার ফোন ধরে প্রথমেই বললেন, ‘ভাইয়া আমি মহিলা ড্রাইভার, আমার বাইকে চড়তে আপনার আপত্তি নাই তো?’ জবাবে বললাম, আপত্তি থাকবে কেন! তিনি বললেন, আমি আসছি ভাইয়া।’’
এভাবে উবারের একজন নারী রাইডারের মোটরসাইকেলে চড়া ও তার সঙ্গে কথোপথনের বিষয়টি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রাফিউজ্জামান সিফাত।
এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তার ফেসবুক টাইম লাইনে আরও লিখেছেন, ‘‘ভেসপা চালিয়ে রাইডার এলেন। রাইড শুরুর পর জানালেন, কেবল মেয়ে হওয়ার কারণে অনেক প্যাসেঞ্জার তার বাইকে চড়ে না। আক্ষেপ করে জানালেন, ‘মাঝে মাঝে আমি অনেক দূর থেকে পিকআপ পয়েন্টে আসি। প্যাসেঞ্জার যখন দেখে আমি মেয়ে মানুষ। তখন তারা বলে, মেয়েদের বাইকে উঠব না, ক্যানসেল করে দেয়। আমি প্রতিবাদ করি না। আমার লস হলেও ক্যানসেল করে দেই। জোর করা তো যায় না। তাই না?’ এই রাইডার আরও বললেন, ‘ভাইয়া প্রতিদিন এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয়, আগে মন খারাপ হতো, ভাবতাম, ছেড়ে দেব। কিন্তু আমাকে তো রোজগার করতে হবে, আমার দুইটা মেয়ে আছে। ওদের বাবা অন্য জায়গায় বিয়ে করেছেন। মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে আমাকেই মানুষ করতে হবে!মেয়েরা চাইলে পাঁচ মিনিটে হাজার টাকা কামাই করতে পারে। আমি তা চাই না। আমি সম্মানের সাথে রোজগার করি। আপনার মতো মানুষরা যখন আমাদের প্রশংসা করেন, তখন খুব ভালো লাগে।’ মনে সাহস পান বলেও জানান।’’
নারী রাইডারদের সঙ্গে রাস্তায় ট্র্যাফিক সার্জেন্ট কেমন আচরণ এমন প্রশ্নের অবতারণা করে সিফাত তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘জিজ্ঞেস করলাম, পুলিশ ট্র্যাফিক সার্জেন্ট ওরা কেমন ব্যবহার করে? তিনি বললেন, ‘ওরা খুব ভালো। আমাকে পারলে স্যালুট দেয়। আমি রুলস ব্রেক করি না। বড় মেয়ে ক্লাশ নাইনে পড়ে। ছোটটা ক্লাস ওয়ানে।’’ এই রাইডার আমাকে বললেন, ‘দোয়া করবেন, বড় মেয়েটা ইন্টার পাস করে ভালো কোথাও চাকরি পেলে আমি নিশ্চিন্ত।’ শাহনাজ আপার বাইকে চড়ে আমি ফিল করলাম। একটা মেয়েকে প্রতিদিন কতশত প্রশ্নবোধক চোখের সামনে জীবন চালাতে হয়। মোহাম্মদপুর থেকে টিএসসি, যত সিগন্যালে বাইক থামলো, আশেপাশের মানুষজন অবাক চোখে আমাদের বাইকের দিকে চেয়ে রইলো। কয়েকজনের চোখে কৌতুক, কয়েকজনের নাক সিটকানো ভাব। পুরুষতান্ত্রিক ইগো! মেয়ে ড্রাইভারের পেছনে ছেলে বসেছে!’’
সিফাত আর ফেসবুক টাইম লাইনে আরও লিখেছেন, ‘মেয়েদের স্কুল কলেজে যেতে দেবেন না, বলে যারা আমাদের মেয়েদের দমিয়ে রাখতে চায়, তারা সমাজের জন্য কোনোদিন মঙ্গলজনক কিছু বয়ে আনেনি। খুশির কথা, শাহনাজরা ওইসব রক্তচক্ষুকে গোনাতেও ধরেন না। সমাজ পরিবর্তন ঘটে শাহনাজ আপার মতো তেজি মানুষের হাত ধরেই।’
এরপর #-হ্যাশট্যাগ দিয়ে সিফাত লিখেছেন, ‘স্যালুট শাহনাজ আপা।’
সারাবাংলা/জেএ/এনএইচ