রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল: ২৪ চিকিৎসকের পদ খালি, নেই চিকিৎসা সরঞ্জাম
১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৭
।। মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
রাজবাড়ী: চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংকটের কারণে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে ৪২ টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৮ জন চিকিৎসক। ফলে রোগীদের ভোগান্তি পোহানোর পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, ৪২ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এর বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১৮ জন। ২৪ জন চিকিৎসকের পদ খালি পড়ে আছে। গড়ে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী দেখা হচ্ছে। আমাদের যা আছে তাই দিয়েই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। আগে যে সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলো তা কম হওয়ায় আমি নতুন যোগ দেওয়ার পর আরও কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিয়েছি।
রাজবাড়ীর বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি পাবনার চর এলাকা থেকেও অনেক রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতিদিন গড়ে ভিড় জমান প্রায় আট-নয় শ রোগী। তাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
চিকিৎসা নিতে আসা রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়ন থেকে আসা মনোয়ারা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখানোর টিকিট পাই। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে সক্ষম হই। হাসপাতালে যদি আরও বেশি ডাক্তার-কর্মচারী থাকতো তাহলে এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
মেয়ের চিকিৎসা করাতে আসা রফিকুর রহমান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে চিকিৎসক বাড়ানো উচিত। পরিবেশও অনেক নোংরা। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আমি অনেক ওষুধ পেয়েছি এখান থেকে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আলী আহসান তুহিন সারাবাংলাকে বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সরঞ্জাম নেই। যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত রোগীদের রেফার্ড করতে হয়। যেমন শিশু রোগীদের কথাই যদি বলি তাহলে দেখা যায় যে, অনেক সময় জন্মের পর শিশুরা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট পায়। এসব ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে শিশুদের কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস (ভেন্টিলেশন) চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেই ব্যবস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, বেশি দিনের জ্বর, ভেরিসোভিয়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যথেষ্ট উপাদান নেই হাসপাতালে। তাই যখন আমাদের হাতে কোনো উপায় থাকে না তখন রেফার্ড করতে বাধ্য হই।
এসব বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. রহিম বকস্ সারাবাংলাকে বলেন, জনবল যদি কোনো জায়গায় কম থাকে সেখানে সেবার মান কম হওয়াটা স্বাভাবিক। এটা শুধু রাজবাড়ীর সমস্যা না, দেশের সব জায়গাতেই চিকিৎসক সংকটের সমস্যা রয়েছে। আমরা বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শিগগিরই সারাদেশে আরও সাত হাজার চিকিৎসক পদায়ন করা হবে। এটি হলে চিকিৎসক সংকট কমবে।
তিনি আরও জানান, এছাড়া আমাদের হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হবার পর প্রয়োজনীয় আরও চিকিৎসা সরঞ্জাম আসবে। তখন আমরা আরও ভালোভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো।
সারাবাংলা/এনএইচ/জেএএম/জেডএফ