‘গণতন্ত্রের লাশের ওপর মহাভোজ চলছে’
১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:২৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গণতন্ত্রের লাশের ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মহাভোজ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (১২ জানুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাজানো ডিজাইনে ভোট লোপাটের মহা ধুমধাম এখন চলছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে। মহাভোজ উৎসবের মহাসমারোহ চলছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনগুলোতে। এভাবে অন্যান্য বাহিনীর ইউনিটেও চলছে ভোজের মচ্ছব।’
তিনি বলেন, ‘যে দল ভোটে বিজয়ী হয়, সাধারণত তাদের কর্মীরাই উৎসব, ভোজ ইত্যাদিতে মেতে থাকে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একটি রাজনৈতিক দলের তথাকথিত বিজয়ে উৎসব উদযাপন করে— এটা শুধু নজীরবিহীন ও হাস্যকরই নয়, হতবাক করা বিস্ময়ও বটে। এটি গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তামাশার বিকৃত প্রকাশ।’
‘সুতরাং এটা আরও সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ হলো, ২৯ ডিসেম্বর রাত ও ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।এখন গণতন্ত্রের লাশের ওপর মহাভোজের আয়োজন করেছে তারা’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এই সমস্ত ঘটনায় আবারও প্রমাণ হয়, দেশ চলবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা একতরফা নির্বাচনের সংস্কৃতিতে এবং শেখ হাসিনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই দেশের নিয়ন্ত্রণ রাখবেন।’
সরকার তথাকথিত হিংসা ও মহাজালিয়াতির নির্বাচনের বিনিময়ে দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করেছে অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, ‘এখন সরকার দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর করছে। সারাদেশে বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মীর বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদেরকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তাদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতার ছেলে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় সমাজ সেবা করতে গেলেও তার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সারাদেশে বিরোধীদল, মত ও বিশ্বাসের মানুষরা সরকারি সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত।’
সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘অন্ধকার রাতে ভোট ডাকাতি ও ভোট হরিলুট সরকারের জন্য শুভবার্তা নয়। বরং এই অপকর্মটির জন্য অচিরেই বিশাল রাজনৈতিক ধাক্কা খেতে হবে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারকে। জোর করে ক্ষমতায় থাকাটা এই ম্যান্ডেটহীন সরকারের জন্য হবে বিবিধ অমঙ্গলের উৎস।’
‘সংলাপ ও পূণ:নির্বাচন দাবি হাস্যকর’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটা কি খুবই সম্মানজনক হয়েছে? রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দমন করে ভোট সন্ত্রাসের একতরফা নির্বাচনের পরও কি প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ?
তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী ভোটার’রা ধিক্কার জানাচ্ছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে। কারণ, তারা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছে তাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। আগের রাতে যেখানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে কি ভোট বলে ? মহাভোট ডাকাতির যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ সবার কাছে আছে। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও ইতোমধ্যে ভোট ডাকাতির তথ্য প্রমাণ তুলে ধরছে।’
রিজভী আরো বলেন, ‘ভোটের আগের রাত ও ভোটের দিন-ই ভোট লুটের দৃশ্য দেখাতে পারত গণমাধ্যমগুলো। কিন্তু গণমাধ্যম ছিল প্রচণ্ড হুমকির মুখে। তারপরও দেশ-বিদেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে ভোট ডাকাতির দৃশ্য দেখিয়ছে, ভোটের ডাকাতির কিছু দৃশ্য দেখাতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে যমুনা টিভির প্রচার ক্যাবল অপারেটর দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল।’
সারাবাংলা/এজেড/জেএএম