কারচুপি করে এত বড় জয় পাওয়া সম্ভব না: সজীব ওয়াজেদ জয়
১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৫৫
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ নাকচ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। কারচুপি করে এত বড় জয় পাওয়া সম্ভব না।
শনিবার (১২ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিগত সরকারের আমলে উন্নয়নের কারণে রাজনৈতিকভাবে সচেতন তরুণরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।’
জয় তার পোস্টে বলেন, ‘সুশীল সমাজের একটি বড় অপপ্রচার হচ্ছে নতুন ভোটাররা রাজনৈতিক দল নিয়ে মাথা ঘামায় না ও তাদের বেশিরভাগই নাকি পরিবর্তন চায়। তারা বুঝতে পারেনি যে, এই নতুন ভোটাররা আমাদের আমলের উন্নয়নের মধ্যে বড় হয়েছে যা তাদের জীবনকে করেছে আরও সহজ ও উন্নত। তারা কেন আমাদের ভোট দেব না?’
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জয় বলেন, ‘সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে বাংলাদেশের মানুষ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই তারা এখন তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছে নালিশ করছে ও সাহায্য চাইছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগ ও লবিং এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চাইছে যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, যা পরিসংখ্যান মোতাবেক একেবারেই অসম্ভব। আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ বেশি ভোট পেয়েছে। এত বড় ব্যবধানের জয় কখনোই কারচুপির মাধ্যমে আদায় করা সম্ভব না।’
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কারচুপির অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘তাদের প্রথম অভিযোগ, ভোটার সংখ্যা ছিল অত্যাধিক, তার মানে ভুয়া ভোট দেওেয়া হয়েছে। এবার ভোট দেওয়ার হার ছিল ৮০ শতাংশ, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ নয়। ২০০৮ সালের ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনে ভোট দেয়ার হার ছিল ৮৭ শতাংশ, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড। সেই নির্বাচনটিতেও আওয়ামী লীগ ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ব্যাপক ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। ২০০১ সালে ভোট দেওয়ার হার ছিল ৭৫.৬ শতাংশ আর ১৯৯৬ সালে ছিল ৭৫ শতাংশ। ওই দুইটি নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোট দেওয়ার হার সামান্য বেশি ছিল কারণ এক দশকে এটাই ছিল প্রথম অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন।’
আওয়ামী লীগ ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্বিতীয় অপপ্রচার হচ্ছে আওয়ামী লীগ নাকি এবার ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এ কথাটি পুরোপুরি মিথ্যা। আওয়ামী লীগ এবার ভোট পেয়েছে ৭২ শতাংশ।’
আওয়ামী লীগের জয়ের প্রথম কারণ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন ‘প্রথম কারণটি খুবই পরিষ্কার। আওয়ামী লীগ আমলে যে কোনো সময়ের বেশি মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে। আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি, মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে, দারিদ্রের হার অর্ধেক করা হয়েছে, মোটামুটি সবাই এখন শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে ইত্যাদি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকার করেছে তা এখন দৃশ্যমান।’
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণাকে প্রাধান্য দিয়ে ২০১৪ সালে থেকেই জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টার কথা জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমাদের নির্বাচনী প্রচার কিন্তু গত বছর শুরু হয়নি। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমাদের প্রচারণা শুরু করে দিয়েছিলাম। জনগণের কাছে আমাদের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করিনি।’
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ভোট কম পাওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়ে জেলে আছেন। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দণ্ডিত আসামি, আছেন দেশের বাইরে পালিয়ে। তাদের সংগঠনের অবস্থা করুণ।’
বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে তুলনা করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘বিএনপি-ঐক্য ফ্রন্টের বার্তাই ছিল আওয়ামী লীগ খারাপ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেই বার্তা গ্রহণ করেনি কারণ তারা নিজেরাই দেখেছে কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে।’
ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের নির্বাচন না করা প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন নিজে নির্বাচনই করেননি। কারণ উনি জানতেন উনি কোনো আসন থেকেই জিততে পারবেন না।’
ফেসবুক পেইজের পোস্টের শেষে জয় বলেন ‘সত্য আসলে বেশি জটিল না। বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা, দেখছে কীভাবে শেখ হাসিনার মতন একজন ডাইনামিক নেত্রী দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিরোধীপক্ষের শত অপবাদ, অপপ্রচার ও কাদা ছোড়াছুড়ি কোনো কাজে আসেনি। কারণ দিন শেষে মানুষ তাকেই বেছে নেয় যে তাকে উন্নত জীবন দিতে পারবে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে