গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে এডিবির ঋণ চুক্তি
১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৫১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ২০১৭ সালের বন্যায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাওয়া ২১ জেলার পল্লী এলাকার সড়কগুলো সংস্কারের আওতায় আসছে। সংস্কার করা হবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ ১৩ জেলার সড়ক। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের অর্ধেক জেলার পল্লী সড়ক সংস্কারে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রকল্প। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। অবশিষ্ট ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা বিদেশি ঋণ হিসেবে দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে প্রথম ধাপে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারের বা ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার সহজ শর্তে ও অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলার তুলনামূলক কঠিন শর্তে ছাড় করবে এডিবি। বাকি অর্থ পরবর্তীতে ঋণ চুক্তি হবে বলে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ ও এডিবির পক্ষে সংস্থার ঢাকা আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পের বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এলজিইডির সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার আলী আকতার হোসেন। তিনি জানান, চুক্তির আওতায় দেওয়া অর্থ সফল ব্যবহারের মাধ্যমে পরবর্তীতে চুক্তি করবে এডিবি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার হচ্ছে গ্রামকে শহর বানানো। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটি পূরণে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে এসডিজি এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বর্মসংস্থান বাড়াতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মনমোহন প্রকাশ বলেন, গত ২০১৮ বাংলাদেশকে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে যা বাংলাদেশের এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ এবং এডিবির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা। তিনি বলেন, সড়ক সংস্কার বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। সাধারণত সড়ক তৈরি হলেও অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার বা ব্যবস্থাপনা করা হয়। কিন্তু এই প্রথমবারের এ প্রকল্পের মাধ্যমে এক সঙ্গেই সব কাজ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ সহজ হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের পাঁচ বিভাগের ৩৪ জেলার মোট ১৮০টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ হবে। এর ২ হাজার ২১০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক সংস্কার করা হবে। সংস্কারের আওতায় আসবে ৪৯৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক। বৃক্ষরোপণ করা হবে ২৫০ কিলোমিটার সড়কে। ২০২৩ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। উৎপাদনশীল কৃষি এলাকায় উচ্চ আয় সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক কেন্দ্রে যাতায়াত সুগম করতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সংযোগ উন্নয়ন, সড়ক অবকাঠামো জলবায়ু সহিষ্ণু এবং আবহাওয়া উপযোগী করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর কাজ শেষ হলে ৫ কোটি ১৫ লাখ কৃষি নির্ভর মানুষ সুফল পাবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি।
এ বিষয়ে এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা বছর সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ। পল্লীর মাত্র ২৮ শতাংশ সড়ক বর্ষায় ব্যবহারের উপযুক্ত থাকে। ইউনিয়ার পর্যায়ের ৮৪ শতাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। আর উপজেলা পর্যায়ে কাঁচা সড়কের হার ৩৩ শতাংশ। যাতায়াত অবকাঠামোর ত্রুটিতে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত গ্রামের মানুষ। ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রামের ৮০ শতাংশ সড়ক সারা বছর ব্যবহারের যোগ্য করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে সংস্থাটি।
সংস্থার নমনীয় ঋণ দান তহবিল অরডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর-কনস্যাশনাল) থেকে ১০ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি। এ ঋণের সুদের হার ধরা হয়েছে ২ শতাংশ। তুলনামূলক কঠিন শর্তের ওসিআর রেগুলার থেকে আসবে ১০ কোটি ডলার। লন্ডন আন্তব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে এ ঋণে আরও দশমিক ৬ শতাংশ সুদ ধার্য করা হয়েছে।
কৃষি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশে পল্লী সড়ক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি খাতের হাত ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ শতাংশ আসলেও এ খাতে মোট শ্রমশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পটি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নেওয়া পল্লী সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। এর ফলে পল্লী অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে কৃষির অবদান বাড়াতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ এখনো পল্লীতে বসবাস করেন। তাদের অধিকাংশই কৃষিতে নির্ভরশীল। পল্লীর নাজুক পরিবহন ব্যবস্থা, বাজারে অংশ নেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কয়েকটি দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের কৃষি খাত পিছিয়ে আছে।
প্রকল্পের আওতায় ৩৪ জেলা নির্বাচনে ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এডিবি। জনসংখ্যার পরিমাণ, কৃষির সম্ভাবনা, কৃষি ফার্মের সংখ্যা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্বাচন করা হয়েছে। এ সব সড়কে বিভিন্ন ট্রাফিক চিহ্ন, পাহারা চৌকি, স্পিড ব্রেকার বানানোর উদ্যোগও থাকবে। কাজ শেষে পাঁচ বছর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের শর্তে এ সব সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এমএইচ