বার্নে বাড়ছে রোগী; একমাত্র উপায় সচেতনতা
১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৪:৪৩
সোহেল রানা,মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা:গত বুধবার শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য সন্ধ্যার পরে বাসার সামনে কাগজে আগুন ধরিয়ে তাপ নিচ্ছিলো। অন্যদের দেখেই সেখানে যায় সাড়ে ছয় বছরের মারিয়া। কিন্তু আগুনের কাছে যেতেই অসাবধানতায় মেয়েটির জামায় আগুণ ধরে যায়, পুড়ে যায় মারিয়ার শরীর। উত্তর আব্দুল্লাহ পুর থেকে সেদিনই তাকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মারিয়ার ছোট্ট শরীরের ১৫ শতাংশই পুড়ে গেছে।
একইভাবে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হন ৬০ বছরের মমতাজ বেগম। তার শরীরের ৭৫ শতাংশই পুড়ে যাওয়াতে চিকিৎসকেরা তাকে আশঙ্কাজনক বলে স্বজনদের জানিয়েছেন। তিনি এসেছেন, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে।
আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জোসনা বেগমও। জোসনা বেগমের মেয়ে আসমা আক্তার সারাবাংলাকে জানায়, শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলে জোসনা বেগম। প্রচণ্ড শীতে মাটির হাড়িতে আগুন পোহাতে গিয়ে শাড়িতে আগুন লেগে দগ্ধ হন জোসনা বেগম।
প্রতিদিন এভাবেই একের পর একক রোগীরা আসছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অসবাধানতাবশত যেমন দগ্ধ হচ্ছে তেমনি গরম পানি, গরম ডাল গায়ে পরেও মানুষ ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।
বার্ন ইউনিটের মেঝেতেও রোগীদের রাখতে হচ্ছে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী হওয়াতে। জরুরি বিভাগের সামনে নানা বয়সের রোগীর ভিড়। রোববার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত রোগী এসেছে ৫১৯জন। এর মধ্যে ১১জন কে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং ৩২জন কে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। এর মধ্যে অধিকাংশই বৃদ্ধ ও শিশু।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশে শীত প্রচণ্ড বেড়ে যাওয়ায় দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দেশে ৬ লক্ষাধিক মানুষ আগুনে পুড়ে যায়। আর এ সবই হয় অসাবধানতায় এবং দরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে।
আর শীতের সময়ে বেশিরভাগ মানুষই গায়ে কম্বল জড়িয়ে আগুন পোহাতে যায়। অসাবধানতায় প্রথমে কম্বলে আগুন ধরে গেলে খুব দ্রুতই সেটি শরীরে ছড়িয়ে পরে।
শীতের সময়ে বেশি দগ্ধ হবার আরেকটি কারণ হিসেবে গরম পানিকে দায়ী করেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, গোসলের জন্য গরম পানি যখন বালতিতে করে না নিয়ে পাতিলে করে নেওয়া হয় তখনই দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটে।
আর শিশুদের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৫ শতাংশই ঘটে গরম পানির কারণে। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই আগুন থেকে বাঁচা সম্ভব।
আর এজন্য গণমাধ্যমের অনেক ভূমিকা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একমাত্র গণমাধ্যমই পারে সারাদেশে এই সচেতনতা তৈরি করতে। কম্বল নিয়ে আগুনের পাশে গেলে ভালো করে জড়িয়ে যেতে হবে, সাবধান থাকতে হবে যেন কম্বলে আগুণ ধরে না যায়। আর রান্নাঘর থেকে বাথরুমে গরম পানি নেবার সময়ে বালতিতে করে নিতে হবে, হাড়িতে করে না নিয়ে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কেবলমাত্র সচেতনতা বাড়লেই অধিকাংশ অগ্নিদগ্ধ হবার ঘটনা ঘটবে না দেশে।
সারাবাংলা/এসআর/জেএ/এমএ