সোহেল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:২৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
চট্টগ্রামে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে হত্যার ঘটনার দ্রুত বিচার এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
রোববার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু।
লিখিত বক্তব্যে মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, ‘ষড়যন্ত্রমূলক এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সোহেল। হত্যাকারীরা তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ড ও মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
অবিলম্বে সোহেল হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ারও জোর দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, মহিউদ্দিন সোহেল দীর্ঘদিন ছাত্র এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার জন্মস্থান পাহাড়তলীকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করার সংগ্রামের প্রথম কাজ হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দিশারী ক্লাবকে পুনরায় সংগঠিত করেন এবং স্থানীয় কয়েকটি মাদকের আখড়া ভেঙ্গে দেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের সওদাগরের নেতৃত্বে-কর্র্র্তৃত্বে ও সাবেক জামায়াত নেতা-বর্তমানে স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা ওসমান খানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা অনৈতিক ব্যবসার আখড়া ভেঙে দিয়ে এলাকাবাসীর জন্য জানাযার নামাজের মাঠ নির্মাণ করে দেন। এমনতর আরো অনেক জনকল্যাণকর উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে স্থানীয় ভূমিদস্যু, মাদক এবং অসামাজিক কার্যকলাপকারী ব্যক্তিদের রোষানলে পড়েন।
আরো পড়ুন : চট্টগ্রামে গণপিটুনিতে মহিউদ্দিন সোহেল হত্যায় বন্ধু গ্রেফতার
তিনি আরো বলেন, ‘তার মতো এ রকম ভালো একটি ছেলের এ রকম পরিণতি হবে তা আমার ভাবতেও অবাক লাগে। মূলত পাহাড়তলী বাজার ও আশপাশের এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতাধীন করার উদ্যোগ, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা করার ঘোষণা এবং তার লিজকৃত জমিতে জানাযার মাঠ করার উদ্যোগ নেয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে সেখানকার প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। যার মূল্য দিতে হয় তাকে তার জীবন দিয়ে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাবেক সহ-সভাপতি রাশেদুল মাহমুদ রাসেল, হাসানুজ্জামান লিটন, সুজাদুর রহমান, রফিকুল আলম গাফ্ফারী রাসেল, ফজলুল হক, আবু সাইদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান টুটুল, জসিম উদ্দিন, রিপন পোদ্দার, মিজানুর রহমান,সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহীন, সাবেক প্রচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল, ঢা.বি ছাত্রলীগ-এর সাবেক সভাপতি সোহেল রানা টিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা ও ওমর শরীফ, সাবেক সহ-সম্পাদক মফিজুল ইসলাম ঢালী, জুলফিকার আলী, শফিক আহমেদ, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তারুল হাসান মিলটন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ফাহিম খান রনি ও মাসুম হাসানসহ অন্যান্যরা।
সোমবার (৭ জানুয়ারি) সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী বাজারে মহিউদ্দিন সোহেলের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পুলিশ ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ব্যবসায়ী ও জনতা মিলে মহিউদ্দিন সোহেলকে গণপিটুনি দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। এসময় বাজারের অসংখ্য ব্যবসায়ী বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে মহিউদ্দিন সোহেলের চাঁদাবাজি এবং রেলওয়ের জায়গা দখল করে অফিস বানানোর অভিযোগ তুলে ধরেন।
তবে মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) তার পরিবারের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহিউদ্দিন সোহেল কোন ছিঁচকে চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসী ছিলেন না। তার পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। তার সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন।
মহিউদ্দিন সোহেল তার জন্মস্থান পাহাড়তলীকে ‘সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত’ করার কাজে হাত দিয়েছিল বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে তার ছোট ভাই শিশির বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের সওদাগরের নেতৃত্বে-কর্তৃত্বে ও সাবেক জামায়াত নেতা, বর্তমানে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান খানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা অনৈতিক ব্যবসার আখড়া ভেঙ্গে দিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর জন্য জানাযা ও নামাজের মাঠ করে দিয়েছিল। এতে মহিউদ্দিন সোহেল স্থানীয় ভূমিদস্যু, মাদক ও অনৈতিক ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েন।’
মহিউদ্দিন সোহেল চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছিলেন। তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিরও নেতা ছিলেন।
সারাবাংলা/এসএমএন