রেইনট্রিতে ধর্ষণ মামলায় সাফাতের জামিন বাতিলের আবেদন
১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৫
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমদের জামিন বাতিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
একই আদালতে বর্তমানে কারাগারে থাকা অভিযুক্ত আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু ও মামলার আসামি নাঈম আশরাফের জামিনের আবেদন করেছেন তার আইনজীবী।
মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস দুই পক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ২২ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন।
আসামি নাঈম আশরাফের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম লিটন। শুনানিতে তিনি বলেন, এ মামলার মোট আসামি পাঁচ জন। আসামি নাঈম আশরাফ ও সাফাত আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এবং অপর তিন জনের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি সাফাতসহ চার জনই জামিন পেয়েছেন। মামলায় সাফাতকে যে অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে, একই অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে নাঈমকেও। তাছাড়া মামলাটি মিথ্যা, পরিকল্পিত ও সাজানো উল্লেখ করে কারাবাস বিবেচনায় নাঈমের জামিন চান তিনি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু ও বাদীর পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাফাতের জামিন বাতিলের বিষয়ে শুনানিতে বলেন, আসামির অসুস্থতার কারণে ট্রাইব্যুনাল জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু আসামি যে এখনও অসুস্থ, এ ধরনের কোনো কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা হয়নি। তাকে দেখেও অসুস্থ মনে হয় না। তাই তার জামিন বাতিল করা প্রয়োজন। জামিন বাতিল না হলে তিনি সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রভাবিত করতে পারেন।
তবে আসামি সাফাত আহমদের পক্ষে আইনজীবী মো. হেমায়েত উদ্দিন তার জামিন স্থায়ীর আবেদন করেন।
আদালতে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক নথি পর্যালোচনা করে অধিকতর শুনানি নিতে হবে বলে জানান।
এদিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এলেও কারাকর্তৃপক্ষ নাঈম আশরাফকে আদালতে হাজির না করায় তার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২২ জানুয়ারি ঠিক করেছেন বিচারক।
২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর সাফাত আহমেদের জামিন মঞ্জুর করেন একই বিচারক। এর আগে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের সহযোগী আসামি সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন এবং বন্ধু সাদমান সাকিব হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন।
২০১৭ সালের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। বাকি তিন আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়।
২০১৮ সালের ১৩ জুলাই একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ওই বছরের ১৯ জুন একই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী ও তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখেন। আসামিরা অস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি দেখায় এবং নির্যাতন করেন। সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের ধর্ষণের শিকার হন বাদী ও তার বান্ধবী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদী আসামি সাদমান সাকিফের পূর্বপরিচিত। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে পরিচয় হয় বাদী ও তার বান্ধবীর। পরে সাফাত নিজের জন্মদিনের কথা বলে ওই দু’জনকে পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান। পরে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত তাদের ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলের ছাড়ে বড় পার্টির কথা বলে হোটেলে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাদী ও তার বান্ধবী সেখানে তেমন কাউকে দেখতে পাননি। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা ওই স্থান ত্যাগ করতে চান। কিন্তু আসামিরা তাদের আটকে রাখেন, মারধর করেন। পরে গাড়িচালক বিল্লালকে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে বলেন সাফাত।
এদিকে, সাফাতের নির্দেশে বাদী ও তার বান্ধবী সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে তার দেহরক্ষী রহমত আলী। তাদের ভয়ভীতিও দেখানো হয়। এ পরিস্থিতিতে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন দুই শিক্ষার্থী। পরে এ ঘটনায় গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর একজন।
সারাবাংলা/এআই/টিআর
নাঈম আশরাফ বনানীতে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ সাফাত আহমেদ হোটেল রেইনট্রিতে ধর্ষণ