অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হননি খালেদা জিয়া
১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:২৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসায় অস্থায়ী আদালতে হাজির হননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, খালেদা জিয়ার পায়ে ফোড়া হয়েছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছেন খালেদা জিয়া।
পুলিশের চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, ‘আদালতে আজ (বুধবার) খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। পুলিশ নিরাপত্তাজনিত সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু তিনি আসেননি।’ কী কারণে তাকে নিয়ে আসা হলো না, সে বিষয়ে ওসি কিছু বলতে পারেননি।
কারা অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় তিনি আদালতে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে তার অসুস্থততার ধরণ সম্পর্কে কিছু জানাতে অপারগতা জানান ওই কারা কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, খালেদা জিয়ার কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। আজ (বুধবার) ঘুম থেকে উঠতেও অনেক দেরি করেছেন। তাই তাকে আদালতে নিতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আদালত সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু খালেদা জিয়া নিয়মিত আদালতে হাজির হতে পারছেন না। তাই এই মামলাটিও বকশিবাজার থেকে কারা আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বুধবার সকাল ১১টা ৪৭ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়, চলে ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। আদালতে শুরুতেই মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন চার্জ শুনানির জন্য রয়েছে। এখন মামলাটি সম্পূর্ণ শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খালেদা জিয়া না এলেও আসামিপক্ষের অন্যান্যদের চার্জ শুনানির অনুরোধ জানান তিনি।
অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, চার্জ শুনানির জন্য প্রত্যকে আসামির উপস্থিত থাকা দরকার রয়েছে। একজন অনুপস্থিত থাকলে চার্জ শুনানি করা যায় না। খালেদা জিয়া অসুস্থ রয়েছেন, তিনি সুস্থ হলে আদালত উপস্থিত হবেন। এজন্য সময়ের আবেদন জানান তিনি।
এসময় আসামিপক্ষের অন্য আইনজীবীরাও চার্জ শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। বিচারক উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন দেন। ওই তারিখে সবাইকে হাজির হওয়ার জন্যও আদেশ দেন বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন।
এর আগে, একই আদালত গত ১০ জানুয়ারি প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারির আদেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নুল আবেদীন মেসবাহ, তাহেরুল ইসলাম, আকরাম হোসেন, আব্দুল হান্নান ভূঁইয়াসহ অন্যরা। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজলসহ আরও অনেকেই।
জরুরি বিধিমালা সংযুক্ত এ মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। রিট আবেদনের কারণে প্রায় ৮ বছর নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রিট খারিজ করে উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পণ করে জামিন পান খালেদা জিয়া।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে মামলাটি তদন্ত করে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপপরিচালক মো. জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভুইয়া, সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর ওই সময়ের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো, এম কে আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম এবং বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম মারা গেছেন। মামলাটিতে বর্তমান আসামির সংখ্যা ১৭ জন।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌসচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লি. (গ্যাটকো)-এর পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এআই/এনএইচ