নতুন এমপিদের শপথের বৈধতা প্রশ্নে রিটের আদেশ বৃহস্পতিবার
১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:১৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে না দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করা হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ রিট দায়ের করেন।
আদালতের শুনানির পরে ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে শুনানি শেষ হয়েছে, আগামীকাল আদেশের জন্য আছে। যেহেতু এটা এখন কোর্টের এখতিয়ার। কোর্ট আগামীকাল আদেশ দেবেন তারপরে পরবর্তী পদক্ষেপ।’
তিনি বলেন, নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন, পূর্ববর্তী সংসদ সদস্য থাকাকালীন অবস্থায় রিটে এটাই তাদের মূল বক্তব্য। কিন্তু এখানে ব্যাপার হচ্ছে এতে কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন তাহলে তাকেই মামলা করতে হয়। কিন্তু এখানে রিটকারী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদের রিট করার কোন এখতিয়ার নাই। তিনি সংসদ সদস্যও না, নির্বাচনে অংশও নেননি। তিনি একজন সাধারণ আইনজীবী, সাধারণ নাগরিক হিসেবে। এখানে উনি কোনভাবেই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি না। এ বক্তব্যই মূলত চলে এসেছে। কোর্টও এই পয়েন্টে নজর দিয়েছেন।’
আপনারা শপথ নিয়েছেন এটা ঠিক ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো যেহেতু সিদ্ধান্ত আসেনি। এটার বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে এখানে যে মুল আর্গুমেন্ট এসেছে তাতে যিনি মামলাটি করেছেন তাকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হতে হবে।
অন্যদিকে রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে সংবিধান লংঘন করেছেন। এখন বাংলাদেশে দুইটা সংসদ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন না এবং দায়িত্ব নেবেন না।’
তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪৮ (৩) বলা আছে, যে দিন শপথ নেবেন সে দিনই তিনি দায়িত্ব নেবেন। আমরা দেখিয়েছি, মাননীয় বিচারপতিরাও যে দিন শপথ নেবেন সে দিন থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যদের জন্যও তাই। এখানে পুরানো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আজকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, শপথ হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ হয়ে গেছে, মন্ত্রী নিয়োগ হয়েছে, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি দিয়েছে। এগুলো সবতো হয়ে গেছে। হয়ে গেলেও আমরা বলতে চাচ্ছি রিটকারি একজন এদেশের নাগরিক ও একজন আইনজীবী। তিনি চান দেশটা সংবিধান অনুযায়ী চলুক। সকলেই সংবিধান মানতে বাধ্য। এই সংবিধান লংঘন করে কেউ যদি কিছু করে থাকে সেটা অবশ্যই অসাংবিধানিক।
খোকন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ সব পয়েন্টে যাচ্ছেন না। শপথ বৈধ, না অবৈধ সেটা বলছেন না। উনি বলছেন, যিনি মামলা করেছেন তিনি সংসদ সদস্যও না, নির্বাচনও করেন নাই। ওনার মামলা করার অধিকার নাই।
আমরা বলবো সুপ্রিমকোর্টে এমন অনেক মামলা আছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়েছে সেখানে কিন্তু একজন আইনজীবী মামলাটি করেছিল। এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্ত আছে- একজন আইনজীবীও রিট করতে পারেন।
খোকন বলেন, রিটকারী একজন আইনজীবী ও দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রিটটি করেছেন। তিনি করতে পারেন।
আপনারা কি নির্বাচন মেনেই নিয়েই এ রিট করেছেন কিনা জানতে চাইলে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কোর্টের একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন, জবাবে আমি বলেছি, নির্বাচন কেমন হয়েছে তা আজকে পত্রিকায় টিআইবির রিপোর্টেই প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি সংবিধান অনুসারে দশম জাতীয় সংসদ না ভেঙে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেওয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে নোটিশটি পাঠান ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
নোটিশে বলা হয়, সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সে অনুচ্ছেদ প্রতিপালন না করে পুনরায় সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ায় বর্তমানে দুইটি সংসদ বহাল রয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থী।
এমন নোটিশের কোনো জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/একে