Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাজে আসছে না ‘প্রস্তুতিহীন’ রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগন্যাল


১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৭

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা কীভাবে চলে?—এ প্রশ্ন বহুদিনের। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ সংযোগ স্থলে ট্রাফিক বাতি জ্বললেও তা কেউ তেমন খেয়াল করেন না। রিমোট কন্ট্রোল সিগন্যাল নয়, বরং ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাতেই চলে ট্রাফিক ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক সিগন্যাল। যাও কয়েকটি আছে, সেগুলোরও সময়ের হিসাব মেলে না পথের গাড়ির চাপের বাস্তবতার সঙ্গে। এর ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, হাতের ইশারা ছাড়া গাড়ির গতির কোনো গতি হয় না।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস)’ প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতিগুলো পুনরায় স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। এই সিগন্যালগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয় রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থাও।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পথ যানবাহনের চাপ ও সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করতেই রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থা করা হয়।’

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র একমাস আগে শুরু হওয়া রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে ‘অপ্রস্তুত’ চালক, পথচারী; এমনকি খোদ ট্রাফিক পুলিশও।

বুধবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকার ছয়টি রিমোট চালিত ট্রাফিক সিগন্যালের সংযোগ সড়কে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। যথারীতি সে সব সড়কের ট্রাফিক লাইটে জ্বলছে এক নির্দেশ, ট্রাফিক পুলিশ সদস্য পথে দাঁড়িয়ে দিচ্ছেন আরেক নির্দেশ।

রাজধানীর হোটেল শেরাটন মোড়, শাহবাগ, কার্জন হল, কদম ফোয়ারা, মৎসবভবন মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড়—এই ছয় পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে রিমোট চালিত ট্রাফিক সিগন্যাল। তারপরও এসব পয়েন্টে গাড়ি চলতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশের ইশারায়।

বিজ্ঞাপন

সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন চালকদের প্রশ্ন করা হয়—তারা ট্রাফিক লাইট, না ট্রাফিক পুলিশদের নির্দেশ মেনে চলেন? জবাবে প্রায় সবাই জানান, তারা ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশ মানেন। কারণ অধিকাংশ সময় ট্রাফিক লাইটে এক ধরনের নির্দেশ থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে অন্য নির্দেশ দেয়। ওই মুহূর্তে তাৎক্ষণিক নির্দেশ মানতেই বাধ্য হন চালকরা।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হোটেল শেরাটন মোড়ে থাকা একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, তাদের রিমোটটি চার্জে রয়েছে। ফলে হাতের ইশারাতেই কাজ চালাতে হচ্ছে তাদের। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে রিমোটের কার্যক্ষমতা দেখতে চাইলে তিনি জানান, রিমোটটি কাজ করছে না। এ সময় তিনি স্বীকার করে নেন, তাদের কাছে থাকা রিমোটগুলো অনেক সময়ই কাজ করে না। এমনকি এই রিমোট চালানোর বিষয়ে তারা কোনো প্রশিক্ষণ পাননি বলেও সারাবাংলার কাছে স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে, প্রকল্প পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেইস প্রজেক্ট থেকে যখন ট্রাফিক পুলিশকে রিমোট চালিত ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা হস্তান্তর করা হয়, তখনই তাদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরেজমিনে ১৩ জানুয়ারি শাহবাগে গিয়ে দেখা গেছে, রিমোটগুলো ভালোভাবেই চলেছে।’ তবে তিনি এও অভিযোগ করেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত ডিউটি বদল হয়। সবসময় একজন প্রশিক্ষিত ট্রাফিক পুলিশ থাকেন না। ফলে এই ব্যবস্থায় জটিলতা হয়। নিয়মিত আমরা গিয়ে তাদের দেখিয়ে দিয়ে আসছি।’

বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো প্রশিক্ষণ ট্রাফিক পুলিশদের দেওয়া হয়নি। আগামী ১৯ জানুয়ারি ও ২৬ জানুয়ারি পরপর দুই শনিবার দুই ব্যাচে ট্রাফিক সদস্যকে রিমোটের মাধ্যমে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’

মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘রিমোট চালিত সিগন্যাল ব্যবস্থা ট্রাফিক সদস্যদের জন্য অনেক সুবিধাজনক। তবে ঢাকার গাড়ির চাপ এত বেশি যে, রিমোট দিয়েও সেটার তাল সামলানো সবসময় সম্ভব হয় না।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘সমস্যা শুধু রিমোটে নয়। সিগন্যাল প্যানেলগুলোও প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়।’ সেগুলো বার বার ঠিক করে কাজ চালাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

কেইস প্রজেক্টের আওতায় ট্রাফিক সিগন্যালের মূলত দুটি কাজ করা হবে। প্রথমত, ট্রাফিক সদস্যরা গাড়ির চাপের ওপর ভিত্তি করে রাস্তার বিভিন্ন দিকের গাড়ি চলাচলের সময় নির্ধারণ করবেন। অন্যটি হলো, একটি ডিসপ্লেতে সিগন্যালে থেমে থাকার সময় দেখা যাবে। যেন চালক ও যাত্রীরা বুঝতে পারেন, ঠিক কতক্ষণ এখানে আটকে থাকতে হবে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেইস প্রজেক্টের আওতায় আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের ৬২টি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের ৮৮টি সিগন্যাল রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় এনে পুরোপুরি ট্রাফিক বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর এটি চালানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাদের।’ ইতোমধ্যে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৮টি রিমোট কেনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ সময়ের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ এই ব্যবস্থা সামলে ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা পুনরায় স্বয়ংক্রিয় করা যাবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেন সম্ভব না? ঢাকাতে আগেও ট্রাফিক লাইট চলেছে, এখন হয়তো অনেকদিনের অনভ্যাসে মানুষের একটু সমস্যা হচ্ছে।’ তবে শিগগিরই মানুষ এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, যানজট কমাতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২টি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের ৮৮টি আধুনিক কাউন্টডাউন ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। তবে দুই কোটি মানুষের যানবাহনের চাপ আর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যর্থ হয় এই প্রচেষ্টা।

সারাবাংলা/এমএ /এমএনএইচ

ট্রাফিক সিগন্যাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর