‘মাদকের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের জিরো টলারেন্স’
১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:৫৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: দুর্নীতি যেই করুক তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি নির্দেশনা যেতে হবে, কেউ দুর্নীতি করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্ত্রাস-মাদক-জঙ্গিবাদের মতোই দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।’
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
টানা তৃতীয় বার সরকার গঠনের পর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত সরকারের মতো মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি বাড়াতে এবং সৃজনশীলতার বিকাশে এবারও পর্যায়ক্রমে সবগুলো মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বেতন-ভাতা, সুযোগ সুবিধা এত বেশি বাড়িয়েছি যে, সেক্ষেত্রে আমি তো মনে করি, আমাদের এ দুর্নীতির কোনো প্রয়োজনই নেই। যা প্রয়োজন তার সব তো আমরা মেটাচ্ছি তাহলে দুর্নীতি কেন হবে? কাজেই এখানে মানুষের মন মানসিকতাটাকে পরিবর্তন করতে হবে।’
‘যে হারে আমরা বেতন বাড়িয়েছি। এ উদাহরণ মনে হয় পথিবীর কোনো দেশেই নাই জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাস-মাদক-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি তা আমরা পূরণ করতে পারবো; তার জন্য প্রয়োজন সুশাসন, তার জন্য দরকার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা।’
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সততা-আন্তরিকতা নিয়ে জনসেবা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সরকার পরিচালনার মূল জায়গা হল আপনাদের এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিশাল এক কর্মযজ্ঞ এখানে। সেক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক অনেক বেশি। রাষ্ট্র পরিচালনার হার্ট জনপ্রশাসন। আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে, আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন। কাজে কে কতটা দক্ষতা, যোগ্যতা দেখাতে পারছে তার ওপর আমরা জনপ্রশাসন পদকও প্রবর্তন করেছি।’
জনপ্রশাসনে পদোন্নতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রশাসনসহ সবক্ষেত্রে শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয় এখানে দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কে কতো বেশি সততার সঙ্গে কাজ করতে পারবে এবং নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলবে, এসব বিবেচনা করে প্রমোশন হওয়া উচিত।’
যে বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ তাকে সেই বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পদ ফাঁকা পেলেই পদায়ন নয়, যার যে বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ রয়েছে তাকে সেই জায়গায় পদায়ন করার বিষয়টাও নজরে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় বাংলাদেশে দরপত্র বাক্স ছিনতাই হত। যখনই আমরা ই-টেন্ডারে চলে গেলাম। এখন আর টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা যায় না। এভাবেই আমি মনে করি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা অনেকটা নিশ্চিত করা যায়। আমরা সেটাও করবো।
আগামী ৫ বছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, প্রবৃদ্ধি এই পাঁচ বছরের মধ্যে যেন ১০ ভাগে তুলতে পারি।’
প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে নিম্ন মূল্যস্ফীতি রাখতে পারার সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর নিম্ন মূল্যস্ফীতি-এর সুফলটা কিন্তু একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়। মানুষ এর সুফলটা ভোগ করে। আমাদের উন্নয়নের সবথেকে বড় সুফল হচ্ছে এটাই। কারণ, অনেক দেশ অনেক দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাদের মূল্যস্ফীতিও অনেক বেড়ে যায়। সেখানে আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
অন্যদের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন- জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফয়েজ আহম্মদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
সারাবাংলা/এনআর/জেএএম