‘হাড়-কাঁপানো শীতে স্কুল ছুটি দেওয়া হোক’
১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:৪৬
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
মাঘ মাসেই শীতের তীব্রতা বেশি হয় বলা হলেও এবার যেন সব সমীরকণ গুলিয়ে ফেলেছে প্রকৃতি। পৌষ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে কনকনে শীত। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এরইমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ৫০ বছরের রেকর্ড।
দেশজুড়ে গত দুই সপ্তাহ জুড়ে চলা শীতের প্রকোপ এখন চলছে। এমন হাড়-কাঁপানো শীত আগামী আরও কয়েকদিন চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আর এ তীব্র শীতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় ভোগান্তি।
অভিভাবকরা বলছেন, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে হলেও বিদ্যালয়গুলোর সময়সূচি বদলানো দরকার। কারণ, এই তীব্র শীতে নানান অসুখে পড়ছে শিশুরা।
ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের সঙ্গে সারাদেশে আজও বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই চলবে শীতের এই প্রকোপ। এ মাসেই আবারও হানা দেবে তীব্র আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ। অভিভাবকদের মত, এই হাড়-কাঁপানো শীতে ছোট শিশুদের স্কুলে যাওয়াটা কেবল অমানবিকই নয়, শিশুদেরকে নিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে চিকিৎসকদের কাছে।
শীতের কুয়াশা ঢাকা ভোরে রিকশায়, স্কুলভ্যানে, রাস্তায় বাবা বা মায়ের হাত ধরে হাঁটতে থাকা শিশুদের দেখা যায়, মাথায় টুপি, গায়ে সোয়েটার তারওপর চাদরে জড়িয়ে স্কুলের পথে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাঘের এমন তীব্র শীতে স্কুলের সময়সূচি পেছানো উচিৎ মন্তব্য করে তেজগাঁওয়ের সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সোহম ইসলামের বাবা সুমন ইসলাম বলেন, এই কনকনে শীতে শিশুরা কীভাবে স্কুল আসে? এটা অমানবিক। অবশ্যই স্কুল কর্তৃপক্ষের সময়সূচি পেছানো উচিৎ।
বাংলাদেশের বর্তমান শীতের প্রকোপ সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়ে রোগাক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশু ও বৃদ্ধদের জানিয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ঠাণ্ডার কারণে সর্দি জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন, কাশি, হাঁপানী বেড়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া, ব্রংকুইলাইটিস, ডায়ারিয়াসহ নানাবিধ অসুখ হতে পারে। চলমান শীতে সকালে স্কুলগামী শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি তাই অনেক বেশি, বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, এমনিতেই সকালে ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হয়। যেমন গত আট জানুয়ারি সকাল ছয়টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিলো দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস।কিন্তু বাতাসের কারণে অনুভূত-তাপমাত্রা (Real feel) ছিল নয় ডিগ্রি। দেশের অধিকতর শীতল অঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তাই এই তীব্র শীতে অতি দ্রুত শিশুর স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হোক বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকার একটি নামকরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, আমাদেরও সমস্যা হয়। শিক্ষকরা চাইলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না- যে কারণে আমরা কিছু বলি না। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও বিদ্যালয়গুলোর সকালের শিফটে পরিবর্তন আনা উচিৎ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে তাদের নিজেদের পক্ষে সময়সূচি পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এখানে দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।
তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রভাতী শাখা এবং দিবা শাখা-দুই শাখা পরিচালিত হয়। দিবা শাখা সকাল সাড়ে সাতটায় এবং দিবা শাখা শুরু হয় ১২টা থেকে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কোনো সমস্যা না হলেও রাস্তায় যে শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয় সেটা জানি। কিন্তু বিদ্যালয় একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সরকারি বিদ্যালয় বলে সরকার থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল তিনি মন্ত্রণালয়ে যাবেন বলেও জানান।
রেবেকা সুলতানা উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন, জার্মানিতে যখন বরফ পরে তখনও সেখানে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকে। কিন্তু তাদের সে রকম প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সমস্যা হলো, আবহাওয়া পরিস্থিতি বোঝা যায় না। এক বছর প্রচণ্ড শীত পড়ে আবার আরেক বছর শীত বোঝাই যায় না। তাই আমাদের পক্ষে পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয় না।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ