Wednesday 04 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাঙ্গামাটিতে নৌ-ফায়ার স্টেশনের অপেক্ষার অবসান কবে?


১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২১ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২২

।। প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

রাঙ্গামাটি: গত ১৩ জানুয়ারি রাঙ্গামাটির বাণিজ্যিক এলাকা রির্জাভ বাজার মসজিদ কলোনিতে আগুন লেগে অন্তত ৮৪টি বসতঘর পুড়ে ছাই গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর। স্থানীয়রা বলছেন, হ্রদঘেরা রাঙ্গামাটিতে একটি নৌ-ফায়ার স্টেশন বা রিভার স্টেশন থাকলে অল্প সময়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। সেক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণও কমিয়ে আনা যেত।

বিজ্ঞাপন

কেবল রিজার্ভ বাজারের আগুনই নয়, এর আগেও এমন অগ্নিকাণ্ডই ঘটেছে রাঙ্গামাটিতে। কিন্তু রিভার স্টেশন না থাকায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে হয় দমকল বাহিনীকে, যা সময়সাপেক্ষ। ফলে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ কাপ্তাই হ্রদ তৈরির পর থেকেই রাঙ্গামাটিতে একটি রিভার স্টেশন বা নৌ-ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও তাদের সেই দাবি পূরণ হয়নি।

রির্জাভ বাজার এলাকার মাসুদ পারভেজ বলেন, রাঙ্গামাটি শহরটা হ্রদের তীরে অবস্থিত। এখানকার পাড়া-মহল্লাগুলোর রাস্তা ছোট। ফলে কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো যায় না। আর অনেক দূর থেকে পাইপ টেনে কাজ করতে হয়। শহরে রিভার স্টেশন থাকলে সহজেই আগুন নেভানো সম্ভব হতো। এতে ক্ষতক্ষতির পরিমাণ আরও কমে যেত।

তিনি বলেন, ‘রোববার রির্জাভ বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় গাড়ি ঢোকানো সম্ভব না হওয়ায় মেইন রোড থেকে পানির পাইপ নিতে হয়েছে। অথচ পুড়ে যাওয়া পাড়াটি ছিল লেকের পাশেই।’

স্থানীয়রা বলছেন, নৌপথে রাঙ্গামাটি ফায়ার স্টেশন থেকে মসজিদ কলোনি এলাকায় পৌঁছাতে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সড়ক পথে ওই এলাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে আরও বেশি। রোববার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরাসরি হ্রদ থেকে দমকল বাহিনী কাজ করতে পারলে আধা ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে প্রায় আাড়াই ঘণ্টা।

বিজ্ঞাপন

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতেই পুরো এলাকা পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে গায়ের কাপড়-চোপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।’

রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন মিটিংয়ে এখানে একটি নৌ-ফায়ার স্টেশনের দাবি জানিয়ে আসছি। বারবারই আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি শহরের মধ্যেই কয়েকটি এলাকা আছে যেখানে সড়ক পথে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। ওইসব এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটলে নৌপথ ছাড়া বিকল্প কোনো পথও নেই। তাই আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

রাঙ্গামাটির সংবাদকর্মী শংকর হোড় জানান, ‘প্রতিবছর রাঙ্গামাটির উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ রাঙ্গামাটিবাসীর দীর্ঘদিনের এই দাবি রিভার স্টেশন স্থাপনে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না, যদিও বিষয়টি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, যখনই কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তখনই নৌ-ফায়ার স্টেশন নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আশ্বাসও দেন। কিন্তু কয়েকদিন পরই বিষয়টি সবাই ভুলে যান।

জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয় বার বার জেলা পরিষদের মিটিংয়ে উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থান দিতে না পারায় আমরা নৌ-ফায়ার স্টেশন নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছি না। রিভার স্টেশন স্থাপন করা হলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় কম লাগত, আর ক্ষতির পরিমাণও কমে আসত।’

সারাবাংলা/টিআর

নৌ-ফায়ার স্টেশন রাঙ্গামাটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর